নরসিংদী প্রতিদিন ডেস্ক: বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে ভ্রমণের পাশাপাশি পরিবার নিয়েও ভ্রমণে যেতে ভালোবাসি। তেমনি এক সকালে স্ত্রী, কন্যাকে নিয়ে ছুট দিলাম সোনাইমুড়ী পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। এলাকাটি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার অন্তর্গত। লালমাটি ঘেরা বৃহদাকার বিভিন্ন বৃক্ষে সমৃদ্ধ সোনাইমুড়ী। ফাগুনের আগুনঝরা গরমেও হিম হিম ঠাণ্ডা। মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায় নির্মল বাতাসে।
ঢাকার পাশেই নয়নাভিরাম সোনাইমুড়ী। নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চারদিকে সবুজের সমারোহ, চেনা-অজানা পাখির কল-কাকলি দেহ-মনে এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। শিশুদের জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। বড়দের সহযোগিতা ছাড়া শিশুরা নিজে টিলার ওপরে উঠতে পেরে যারপরনাই আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। এবার ভৈরবের চণ্ডিবের এলাকার হক মঞ্জিলে যাওয়ার পালা। অনুমতিক্রমে প্রবেশ করা সম্ভব। মঞ্জিলের কর্তা বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছ সাজিয়েছেন, কৃত্রিমতাকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যার কারণে সারাক্ষণই পাখির ডাকে পরিবেশ মুখরিত থাকে। নির্দয় শিকারী থেকে শতভাগ মুক্ত বাসা বেঁধে থাকা পাখিকুল। পড়ন্ত বিকালের ঝিরঝির বাতাসে জলপাই গাছের নিচে বসে কোকিলের মিষ্টি কণ্ঠের কুহু কুহু ডাক কখনও ভোলার নয়। ইচ্ছে হলে গাছ থেকে পেড়ে নানা ফলের তাজা স্বাদ নেয়া সম্ভব।
বিশেষ করে মালাইওয়ালা ডাবের তুলনাই হয় না। কালের পরিক্রমায় ফিরে আসবে বসন্ত আবার ছুটে যাব সদলবলে হক মঞ্জিলে। মনের গহীনে এই বাসনাই পুষে রাখলাম আগামী ফাগুন পর্যন্ত। পাখির কিচিরমিচিরে খুব সকালে ঘুম ভাঙল। ফ্রেশ হয়ে ছুট দিলাম ভৈরব ব্রিজের নিচে। ভৈরববাসীর জন্য এটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। মেঘনা পাড়ের বাতাস, টলটলে পানি, কিছুক্ষণের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম শৈশবের স্মৃতিতে। ছলাৎ ছলাৎ পানির শব্দে টনক ফিরে এলো, আমার জলভূমি পুরান ঢাকার বাদমতলীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদীর আজ কি বেহাল দশা! মেঘনা নদীর পানিতে হাত-মুখ ভিজিয়ে বুড়িগঙ্গার পুনঃজীবন কামনা করে অগ্রসর হলাম ব্রিজের অপর প্রান্তে অবস্থিত আশুগঞ্জ সার কারখানার দিকে।
ইতিমধ্যে যোগ দিল আমার দুই বন্ধু, পূর্বপরিচিত এক কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য থাকায় ভেতরে প্রবেশ করে দেখা হল, জানা হল, কিভাবে সার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, উৎপন্ন হয়। খোলা আকাশের নিচে শত শত ইউরিয়া সারের বস্তা পড়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ মনটা উদাস হল। তবে সার যেন বিনষ্ট না হয়, সেই জন্য ছিল রক্ষণাবেক্ষণকারীদের আপ্রাণ চেষ্টা। বন্ধু শামিমের অনুসন্ধানী প্রশ্নে দায়িত্বশীলরা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়েছেন, সেই সঙ্গে আমিও বিব্রত। তবে ওর ওপর সব রাগ মিলিয়ে গিয়েছিল, যখন অনির্ধারিত ভ্রমণ বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পথে। ওয়াও! কি সুন্দর দৃশ্য? এ পথে না এলে হয়তো ভ্রমণের সার্থকতা পূর্ণ হতো না। দোস্ত তোকে ধন্যবাদ, তবে কোথাও গিয়ে কাউকে অবান্তর প্রশ্ন করাও ঠিক নয়। সমর্থন দিল চন্দন। ভুল বুঝতে পেরে মাথা নোয়াল। আমাদের গাড়ি পার্কিং করলাম বেইলি ব্রিজের ওপর। দু’পাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি, মাঝে পিচঢালা নতুন রাস্তা। মাথার ওপর খোলা নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, দৃষ্টির শেষসীমায় সবুজের মেলা, জলে মাছের লম্পঝম্প, সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য সবকিছু মিলিয়ে নাসিরনগর ভ্রমণের জন্য এক অনিন্দ্য সুন্দর এলাকা। ঢাকা থেকে নাসিরনগর যেতে যেতে পথে আরও অনেক কিছুই দেখা হল। এবারের ভ্রমণে নতুন সঙ্গী ছিল মিষ্টি মেয়ে লিমা, দুষ্টের শিরোমণি আলেয়া, গোবেচারা মমিন, ঈষাণ, সাইফ ও সর্বকনিষ্ঠ বাসিতাহ। ভ্রমণপিপাসুদের প্রতি তাই প্রশ্ন আসে দেরি কেন? চটজলদি সবকিছু গুছিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায়। খরচ সহনীয়, সুবিধা হবে মাইক্রো নিয়ে গেলে।