— জানো আজকে একটা আইস্ক্রিম খাইছি, ফ্লেবার টা অনেক ভালো ছিলো। আমি চিন্তা করতেছি ডেইলি এটা খাবো
— মনে হচ্ছে বেশ আনন্দে আছো
–হ্যা, তুমিও খেয়ে দেইখো ভালো লাগবে
— মাইর চিনো??
— হ্যা কেন?
— খাওয়ার ইচ্ছা আছে?
— একদম না
— ঢং কম করো। যেইটা করতেছ সেই জন্য তো মাইর খাইবা। ওই ফাজিল তোমারে না কতবার বলছি ঠান্ডার
মধ্যে আইস্ক্রিম খাবানা? কথা কানে যায়না?
–একটাই তো খাইছি
–একটাও খাবানা।গলা ব্যাথা, কিছু
খাইতে পারতেছি না কথা বলতে পারতেছি না এইসব কয়দিন আগে কে বলছিলো। আমার যদি কোন ক্ষতি হয় তোমার খবর
আছে
— আমি আইস্ক্রিম খাইলে তোমার ক্ষতি হবে কেন?
— কারণ তুমি আর আমি আলাদা কেউ না
–আর তুমি যে ডেইলি কোল্ড ড্রিংকস খাও, টন্সেলের ব্যাথায় কাতরাও তখন আমার বুঝি কোন ক্ষতি হয়না। ডাক্তার
অপারেশন করতে কাকে বলছে? তোমাকে নাকি আমাকে??
–আমার কথা বাদ দাও, তুমি ঠান্ডা কিছু খাবানা ব্যাস
— বল্লেই হলো?? আমি আইস্ক্রিম খাবো।
–ওকে ফাইন, দেখি কেমনে খাও ।। আমার কসম লাগে তুমি ঠান্ডার মধ্যে আইস্ক্রিম খাবানা
–অই অই অই এইটা কি করলা তুমি?
–ঠিক ই করছি, আমি এতো কিছু জানিনা। এইবার আইস্ক্রিম খাওয়া না খাওয়া তোমার ইচ্ছা যে কোন এক কারনে ওর সাথে আমার সম্পরকের বিচ্ছেদ ঘটে।
এর আগে ওর সাথে এমন বিচ্ছেদ কয়েক শ বার হইছে যার মেয়াদ ছিলো সরবোচ্চ এক ঘণ্টা। কিন্তু সেবার দুজনেই বেশ সিরিয়াস ছিলাম। এফবি তে অনলাইনে দেখলেও কেউ কাউকে নক করতাম না। ও আমাকে দেখিয়ে স্ট্যাটাস দিতো যে সে স্মোক করতেছে। আমি তাকে দেখিয়ে স্ট্যাটাস দিতাম আমি আমার চুল কেটে ছোট করে ফেলছি।
জানুয়ারির এক তারিখ ছিলো অথচ ও আমাকে উইশ করেনি। সারাদিন ওর এস এম এস এর অপেক্ষায় ছিলাম।
থাকতে না পেরে সেদিন রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে আমি ওরে উইশ করি, কিন্তু ও আমাকে এভয়েড করতে থাকে। মেসজ দেই কোন রিপ্লাই ও দেয় না, দিলেও এমন কিছু লেখে মনে হয় যেন ও আমাকে চিনেই না। আমি জানতাম যে আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারব না। তাই ফিরে আসতে বলি ওকে কিন্তু ও রাজি হয় না।
এতোবার ওকে সরি বলি এতোবার ক্ষমা চাইছি তবুও সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। আমিও সরে যাই। আমার আইডিতে ও ছাড়া আর কোন ছেলে ছিলোনা, সেদিনের পর থেকে আমার আইডিতে অনেক ছেলে ফ্রেন্ড হয়। ও আমাকে নিষেধ করছিলো ফেবুতে যেন আমার কোন পিক আপলোড না করি। সেদিনের পর থেকে পিক আপলোড দিতাম। আমি ইচ্ছা করেই আমার ফেবু পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করিনি কারন আমি জানি যে ও আমার আইডিতে যেয়ে পিক ডিলেট করে দিবে আর ও সেটাই করতো। এরপর আমি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলি, আর সেতো মহা চিন্তায়। আমি ঐসব ছেলেদের সাথে কি না কি চ্যাট করি। ছেলেগুলা কেমন, ভালো কিনা তাই সে ঐসব ছেলেদের প্রোফাইল চেক করতো। আমার স্ট্যাটাস এ কমেন্ট করতো কিন্তু আমি ওর কমেন্টের রিপ্লাই দিতাম না, মেসেজের রিপ্লাই ও দিতাম না। সে আমাকে অনেক লম্বা লম্বা মেসেজ পাঠাতো আর আমি সিন করে রেখে দিতাম।
ফিরে আসতে চাইলো তখন আমি রাজি হইনি। রাজি তো হব জানি তবুও শুধুই নাচাইতেছি ওরে। সেদিন ফ্যামিলির সবার সাথে বাণিজ্য মেলায় যাবো। প্রতিবার মেলায় গেলে আমি আইস্ক্রিম মিস দেইনা, তাই এবারো মিস দিতে চাইনি কিন্তু আমি যে আটকা পড়ে আছি, তাই ওকে ফেবুতে নক করলাম যদিও তখনো ব্রেক আপ চলতেছে।
— আমি মেলায় যাচ্ছি
–কার সাথে যাবা?
— আম্মু, ভাইয়া, ভাবি আপু
— সাবধানে থাইকো, সবসময় উনাদের সাথে থাকবা
— বলছি যে..
— কি?
— মেলায় গেলে আমি আইস্ক্রিম মিস দেইনা
— ভালো তো, খাবা, প্রব্লেম কি?
–তুমি না মানা করছ?
— ঢাকায় শীত কেমন?
— নেই, আজকে একদম গরম
— ঠিক আছে, একটা খাবা তাইলে। আর আমি তো একেবারে তোমারে আইস্ক্রিম খাইতে নিষেধ
করিনি বলছি শীতের দিনে খাবানা
— থ্যাংকস, আমি আসি
— সাবধানে থাকবা, লাভ ইউ
— হুমমমম বাই
মেলা থেকে ফেরার পর
— কয়টা খাইছ?
— একটা ই তো
— মেলায় ছবি তুলছো না?
— হ্যা তুলছি তো ( আমি এতক্ষন ভাবতেছি যে ও ছবি চাইতেছেনা কেন? আগে আমি ডেইলি ওর কাছে ৫/৭
টা করে ছবি পাঠাতাম)
— তোমারে অনেক দিন দেখিনা
–হ্যা তো?
— দেখতে ইচ্ছে করতেছে খুব
–তো আমি কি করব?
— দিবানা?
— কি?
— ছবি
— কেন দিবো? তুমি আমার কে লাগো?
— জানিনা, তবে তুমি আমার সব। দাও না প্লিজ
–ওয়েট, দিতেছি
— লাভ ইউ
— হুম
ছবি দেখার পর
–একটা সত্যি কথা বলব?
–বলো
— তুমি আগে থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছ
–থ্যাংকস
— তোমারে আদর করতে ইচ্ছা করতেছে
— খবরদার, একদম করবানা, তুমি সেই রাইট নিজেই
হারাইছো, তুমি এখন পর পুরুষ
— ওকে, তুমি যখন বলবা তখন করব।
— আমি কখনো বলবো না। তুমি আমার কেউ না
— এতো কঠিন কিভাবে হতে পারলা?
— তুমি যেভাবে কঠিন হইছিলা,
যেভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিছিলা।
— মানলাম আমি ঠিক করিনি,
তুমি তো জানো আমি তোমারে ছাড়া কতো কষ্টে আছি
–এইসব বলে লাভ নেই। তোমার জন্য আমার মনে কোন ফিলিংস নাই।আমি টোটালি চেঞ্জড
–তাইলে আমাকে জিজ্ঞেস করে আইস্ক্রিম খাইলা কেন?
আমার ক্ষতি হলে হইতো, কেন তুমি আমার কসমের কথা মনে করে আইসক্রিম খাওনাই এতোদিন??
আমি জানি তুমি আমারে ঠিক আগের মতোই ভালোবাসো,
তবে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ আর নিজে কষ্ট পাচ্ছ?
কিছুদিন পর আবার আমাদের সব কিছু ঠিক হয়ে গেল। আগের থেকেও বেশি ভালোবাসি একে অপরকে। আমি অবশ্য বেশ ঝাঁরি শুনছিলাম চুল কাটছো কেন তুমি? আমার চুল কাটার রাইট পাইছো কই?
ফেবুতে পিক আপলোড দিলা ক্যান? আর
ফ্রেন্ডলিস্টে যতগুলো ছেলে আছে সবাইকে এক্ষুনী ব্লক দিবা ব্লা ব্লা ব্লা ” তার কয়েক মাস পর সবকিছু একেবারেই উল্টে পাল্টে গেল । কোন কারন ছাড়াই ও আমাকে একা ফেলে সারাজীবনের জন্য চলে গেল। না না আসলে আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি। কারণ ওতো বলেছিলো ও আমাকে নিজের জীবন থেকেও বেশী ভালোবাসে। আমার ভালোবাসায় নিশ্চই কোন কমতি ছিলো তাই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ঠিকই তো আমি ওকে কখনো ভালোইবাসিনি। সামনে রাখা আইস্ক্রিম টা গলে গেছে। ধুর কসম টসম কিছু না। আমি গলে যাওয়া আইস্ক্রিম খাইনা…
লেখক:
অন্তিম নীলাদ্রী
ছোটগল্পকার