লক্ষন বর্মন,নরসিংদী প্রতিদিন: স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে নরসিংদীর স্বজন সমাবেশ এর উদ্যোগে ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শের-ই বাংলা ক্লাবের দ্বিতল ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শহীদের রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন। জীবন-মৃত্যুর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভয়ংকর অধ্যায় পার হয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন, সাধনা ও নেতৃত্বের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মহান এ নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয় পূর্ণতা পায়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশার অভিযাত্রা।’
স্বজনের সহ-সভাপতি সরকার সগির আহম্মেদ এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বজন সভাপতি আসাদুজ্জামান খোকন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান এড. মো: আসাদোজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, নাট্যকার শাহ-আলম মিয়া সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বজন সাধারণ সম্পাদক সুমন চন্দ্র সরকার। আলোচনায় অংশ নেন নাট্যকার শাহ-আলম মিয়া, স্বজনের সহ-সভাপতি রতন দাস ও ফুটবলার মো: কিবরিয়া । অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান এড. মো: আসাদোজ্জামানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দেন স্বজন সদস্যরা।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, শের-ই বাংলা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম নান্নু, মোস্তাক আহমেদ ভ’ইয়া, মো: আজিজ মিয়া, নেয়ামুল বাসার, মো: কামাল,সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ ভৈামিক, সাধারণ সম্পাদক সুমন চন্দ্র সরকার, সহ- সাধারণ সম্পাদক লক্ষন বর্মন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমেনুল ইসলাম ভ’ইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন, অর্থ সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক মো: রিপন মিয়া, সহ-সাংকৃতিক সম্পাদক সৈকত জামান বাবু, কার্যকরী সদস্য হান্নান সরকার হানি, তরিকুল ইসলাম, সোহাগ মোল্লা, তুহিন মিয়া প্রমুখ।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. আসাদোজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালের ছাব্বিশে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাঁকে বন্দী করে রাখা হয় পাকিস্তানের কারাগারে। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে বাঙালি জাতি প্রাণঢালা সংবর্ধণা জানানোর জন্য ১০ জানুয়ারি ভোর থেকে ছিল অপেক্ষায়। ঢাকা তেঁজগাও বিমানবন্দর থেকে তিনি তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দানে আসেন। বিকেল পাঁচটার দিকে রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু আবেগাপ্লুত ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের স্বাদ আজ পূর্ণ হয়েছে, আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে দেশ স্বাধীন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১০ জানুয়ারির ভাষণে তিনি দিয়েছিলেন দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও প্রকাশ করেছিলেন তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন।
স্বজন সভাপতি আসাদুজ্জামান খোকন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিন বিশ্বকবিকে উদ্যোশে বলেছিন ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালী যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালীর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’
বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, পাকিস্তানে বন্দিদশার সময় বঙ্গবন্ধুর জন্য ‘তার সেলের পাশে তাহার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। তখন আমার নেতা বলেছিলেন প্রস্তুত, আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমার নেতা সেইদিন তাদের রক্ষচুক্ষুকে ভয়পাইনি। সেদিন তিনি আরোও বলেছেন, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালী জাতিকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালী আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’ পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। তখন বাংলার প্রতিটি মানুষ জয়বাংলার শ্লোগান দিয়েছিল তারপরও ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট সপরিবারকে গুলি করে হত্যা করে ছিল। জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ আজ নিজের যোগ্য আসন করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।