লক্ষন বর্মন, নরসিংদী : নরসিংদীর মেঘনানদী বেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালীতে বড় ভাইয়ের হাতে ৩ সহদোর ভাই-বোন খুন হয়েছে। ধারালো আস্ত্রের আঘাতে গুরুত্বর আহত হয় আতিকুর রহমান নামে আরেক ভাই। এ ঘটনায় ঘাতক ভাই রুবেলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার
দিকে গ্রামবাসী তাকে পুলিশের নিকট শোপর্দ করেন।
পারিবারিক কলহের জের ধরে বুধবার রাত সোয়া ১২টার দিকে সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীর পূর্বপাড়া গ্রামে আপন বড় ভাইয়ের হাতে দুই বোন এক ভাই সহ ৩জন খুন হয়। সে স্থানীয় এক মাদ্রসায় শিক্ষকতা করেন।
নিহতরা হলো আলোকবালীর পূর্বপাড়া গ্রামে আবু কালাম মিয়ার ছেলে ইয়াসিন (১০),মেয়ে মরিয়ম (৭),মাহিয়া (৫)। ইয়াসিন স্থানীয় আলোকবালী মাদ্রাসার ২য় শ্রেনীর ছাত্র।
পুলিশ ও নিহতদের স্বজনরা জানায়, আলোকবালী পূর্বপাড়ার বাঁশ বিক্রেতা আবু কালামের ৪ ছেলে ২ মেয়ে। মেঝো ছেলে রুবেল মিয়া (২২) কখনো রাজমিস্ত্রি অথবা দিনমজুরের কাজ করতেন। বাড়ির পাশ্ববর্তী আলোকবালী দারুস সোন্নাহ মাদ্রাসা বড় ছেলে আতিকুর মিয়া (২৫) শিক্ষকতা করেন এবং ছোট ছেলে ইয়াসিন মিয়া (১০) দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়েন।
গত সোমবার রুবেলের স্ত্রী ও সন্তান শ্বশুড় বাড়িতে যায়। বাবা তৃতীয় ভাইকে ইসমাইলকে (১৬) নিয়ে নদীতে বাঁশ পরিবহন করতে চলে যায়। ফলে বাড়িতে শুধু মা ও ছোট দুই বোন ছিল।
এরই সুযোগে সন্ধ্যায় রুবেল মাদ্রাসা থেকে মায়ের কথা বলে ছোট ভাই ইয়াসিনকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। ছোট বোন মরিয়মকে নিজ ঘরে ঘুমানোর কথা বলে রাতে মায়ের কাছ থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে দুই ভাইবোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। দুইজনকে হত্যার পর পটার্শের রুমে মা কুলসুম বেগমের সাথে ঘুমিয়ে থাকা অপর ছোট বোন মাহিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রুবেল।
সব শেষ রাত এগারটার দিকে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে রুবেল মাদ্রাসার শিক্ষক বড় ভাই আতিকুর মিয়াকে মায়ের কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। বাড়ীর অদূরে পৌছলে হঠাৎ পেছন থেকে রুবেল ধারালো অস্ত্র দিয়ে বড় ভাইয়ের মাথায় আঘাত করতে থাকে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আতিক আত্মচিৎকার শুরু করেন। ওই সময় এলাকাবাসী ছুটে এসে আতিকুরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে অন্যান্যদের ভাই-বোনদের হত্যার বিষয়টি নজরে আসে। আহত আতিকুরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় বাড়ি ও মসজিদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় ঘাতক রুবেল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নিবার্হী কমকর্তা মো: সেলিম রেজা,স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু,জেলা সি আই ডি ও পুলিশ ইনবেষ্টিকেশন (পি,আই,বির) সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দরা।
ছেলের হাতে শিশু ৩ ছেলে-মেয়ের হত্যার ঘটনায় বাকরুদ্ধ মা কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, রুবেলই সংসারে তার স্ত্রীর কাজ করা নিয়ে সন্ধায় তার সাথে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু ভাই-বোনদের মেরে ফেলার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। কারন ভাই-বোনদের সবচেয়ে বেশি আদর করতো রুবেলই। তবে মাঝে মধ্যেই সে বলতো,মাকে ছাড়া সবাইকে মেরে ফেলবে।
এই ঘটনায় নিহতদের বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে ছেলে রুবেলের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সে আমার চোখের মণিদের হত্যা করেছে। সে সুযোগ পেলে আমাদেরও মেরে ফেলবে। আমি তাঁর ফাঁসি চাই।
সদর উপজেলা নিবার্হী কমকর্তা মো: সেলিম রেজা বলেন,অনুসন্ধানে জানা গেছে,ঘাতক রুবেল তার স্ত্রী দ্ধারা মরডিলেট হতো। তাছাড়া তার স্ত্রী ক্ষেত খামারে কাজ করতো সেটাও সে পছন্দ করতো না। এ নিয়েই মায়ের সাথে দন্ধ।
স্থানীয় চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু বলেন, রুবেল মানসিক প্রতিবন্ধ। নয়তো সে এ ঘটনা ঘটাতে পারতো না। তাছাড়া রুবেল আলোকবালী উত্তর পাড়া গ্রামের কেরামত শাহ মাজারের ভক্ত ছিলেন। সে প্রাইয় সেখাতে যাওয়া আসা করতো। কিন্তু মসজিদের ইমাম গন ও মাজারের হুজুরের কথার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত হওয়ায় মাঝে মধ্যেই সে অস্বাভীক আচরন করতো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম বলেন, নিহতদের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের পরিবার ও গ্রেপ্তারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সুনিদিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। যা পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই সামান্য বিষয়। এগুলোর জন্য নিজের আপন ভাই-বোন খুন করার মতো বিষয় না। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য আদালতে তাঁর রিমান্ডের আবেদন করা হবে।