নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী প্রতিদিন: নরসিংদীতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১৪ বছরের এক কিশোরী যাত্রা শিল্পীকে (আঁখি আক্তার) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত যাত্রা শিল্পী ৪ মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়লে হত্যার ভয় দেখিয়ে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়েছে। এতে অসুস্থ্য হয়ে পড়া ওই যাত্রা শিল্পী নরসিংদী জেলা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। দারিদ্রতার কারণে ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে না পেরে জীবিকার তাগিদে গত ৭ মাস পূর্বে ভৈরব থেকে নরসিংদীতে আসেন ১৪ বছরের কিশোরী। সে নরসিংদীর একটি যাত্রা দলে কাজ করে।
মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, খবর পেয়ে শিল্পীর মা ছুটে এসে মেয়ের সেবা করছেন। প্রতারনা শিকার শিল্পী ও তার মা জানান, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ওই শিল্পী সবার বড়। বাবার অভাবের সংসারের কথা চিন্তা করে সাত মাসে আগে সে নরসিংদীতে এক বান্ধবীর বাড়িতে থেকে যাত্রা দলে কাজ শুরু করে।
নির্যাতিত শিল্পী জানায়, পরিচিত এক বান্ধবীর সৌজন্যে যোগ দেয় শহরের ভেলানগরের একটি যাত্রা গোষ্ঠিতে। সেই সুবাধে ভেলানগরে থাকার সময় পরিচিত হয় স্থানীয় মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ইসমাইল মোল্লার সঙ্গে। ইসমাইল মেয়েটির দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরই প্রেক্ষিতে মেয়েটি ৪ মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। মেয়েটি ইসমাইলকে বিয়ের চাপ দিলে ইসমাইল তাকে রাতের অন্ধকারে ভেলানগর ব্রীজের নিচে নিয়ে গিয়ে হত্যার ভয় দেখায়। পরে ২৮ জুলাই মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার অবৈধ গর্ভপাত ঘটায়। পরে মেয়েটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সে ভেলানগর মাইক্রোবাস মালিক সমিতিকে বিষয়টি অবহিত করলে তাদের সহযোগিতায় মেয়েটিকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তবে আগের থেকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানান, অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের কারণে মেয়েটি সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত তিন দিনের চিকিৎসায় এখন তার অবস্থা বিপদমুক্ত। তবে তার ধারাবাহিক চিকিৎসার দরকার।
নির্যাতিত যাত্রাশিল্পী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলে, ‘ইসমাইল আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার জীবন নষ্ট করেছে। সে নিজের অপরাধ ঢাকতে সুযোগ পেলেই আমাকে মেরে ফেলবে। আমি তার বিচার চাই।’
ভেলানগর মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। সমিতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় জরুরি সভায় মাইক্রোবাস মালিক ইসমাইল মোল্লাকে সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরাও ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
নরসিংদী সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, নির্যাতিত যাত্রাশিল্পীর মা বাদী হয়ে অভিযুক্ত ইসমাইল ও তার সহযোগী ইয়াকুবসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদেও গ্রেপ্তার করতে অভিযান শুরু হয়েছে।
# লক্ষন বর্মন