লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন: নরসিংদী শহরের চাঞ্চল্যকর দিপ্তি হত্যামামলার দায় স্বীকার করেছে তারই স্কুল পড়ুয়া ছেলে প্রিতম । রাগে বশিবত হয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধায় নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মনীসা রায় এর আদালতে এ জবানবন্দী প্রদান করেন। তবে নিজ মাকে হত্যার বিষয়ে দেয়া জবানবন্দি বিশ্বাস করতে নারাজ মামলার বাদী। নিহতের পরিবার বলছেন, সন্তান কখনো মাকে হত্যা করতে পারে না। দিন দুপুরে প্রকাশ্য এ হত্যাকান্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ । নয়তো পুলিশ পিটিয়ে ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করতে হবে কেন ? মামলার বাদী ও পরিবারের দাবী চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডকে নিয়ে ধু¤্রজাল জাল তৈরী করা হচ্ছে।
পুলিশ ও আদালতে সূত্রে জানাযায়, নিহত দিপ্তি ভৌমিকের ছেলে প্রিতম। সে সাঠির পাড়া কলি কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীর ছাত্র। ঘটনার দিন তার ইংরেজী পরিক্ষা ছিল। পরিক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পর নিহত মা দিপ্তি ভৌমিক (৪৭) পরিক্ষার কেমন হয়েছে জানতে চায়। পরিক্ষা ভালো না হওয়ায় মা তার ছেলে প্রিতমকে গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে প্রিতমকে মারধোর করতে থাকেন। ওই সময় নিহত দিপ্তি ভৌমিক ছেলেকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এতে প্রিতম উত্তেজিত হয়ে রাগ হয়ে যায়। পরে রান্না ঘর থেকে বটি এনে মা’কে জবাই করে হত্যা করে। কিছু ক্ষন পর তার বোন জামাই ও মামালার বাদী নয়ন সাহাকে মায়ের মুত্যুর সংবাদ জানাই। তাকে বলা হয়, কে-বা কারা-যেন মাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছেন।
গত মাসের ৮ তারিখ দুপুর ২টার দিকে পৌর শহরের মধ্যকান্দাপাড়া মহল্লার গোপীনাথ জিউর আখড়াধাম সংলগ্ন এলাকায় নিজ বাসায় খুন হয় দিপ্তি ভৌমিক (৪৭)। দিপ্তি ভৌমিক শহরের হরিপদ সাহার বহুতল ভবনের পঞ্চম তলায় স্ব-পরিবারে ভাড়ার থাকতেন। তার স্বামী প্রদীপ ভৌমিক শেখেরচর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। ঘটনার দিন সকালেই স্বামী প্রদীপ ভৌমিক তার ব্যবসার কাজে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর পরই তার ছেলে পরিক্ষা দিতে স্কুলে চলে যায়। দুপুর ১টার পর বাসায় ফিরে মায়ের জবাই করা লাশ দেখতে পায়।
নিহতের দিপ্তি ভৌমিকের স্বামী প্রদিপ সাহা বলেন,আমার ছেলে প্রিতম কোন ভাবেই তার মাকে হত্যা করতে পারে না। পরিকল্পিত ভাবে আমার স্ত্রীকে হত্যা করে আমার একমাত্র ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন প্রিতমকে পিটিয়ে ও ইলেকট্রিক সর্ট দেয়া সহ নানা ধারনের নির্যাতন করা হয়। তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আদালতে জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
মামলার বাদী ও নিহতের মেয়র জামাই নয়ন সাহা বলেন, হত্যার ২৬ দিনেও কোন রহস্য বের করতে পারেনি পুলিশ। কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের উপর চাপ কমাতেই হত্যার দায় ছেলের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। নয়তো ৫ দিন আটকিয়ে রেখে কেন তাকে নির্যাতন করা হলো ? । আমাদেরকে বিশ্বাস করাতো হলো ফরেনসিক রিপোর্ট দেখাতে হবে। একই সাথে তার উপযুক্ত প্রমান দিতে হবে।
মামলার আইয়ু মোস্তাক আহাম্মেদ বলেন,নিহতের ছেলে প্রীতম বিভিন্ন ধরনের নেশা করতো। সবসময় উগ্র মন-মানসিকতায় থাকতো। নেশা গ্রস্থরা যে কোন কর্মকান্ড ঘটাতে পিছ পা হয় না।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, হত্যাকান্ডের যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় পাশের রুমে তার দুই বন্ধু উপস্থিত ছিল। জিজ্ঞাসাবাসে সে আদালতে তা স্বীকারও করেছে। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আরো বলেন, ছেলে মাকে হত্যা করতে পারে বিষয়টি অভাবনীয়। চুরি, ডাকাতি,শত্রুতা বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে তদন্তে নামে পুলিশ। তবে কোন ধরনের মোটিভেই এই হত্যার রহস্য ধরতে পারছিলনা। সে কারনে আমরা পরিবারের সদস্যদের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলাম। বিভিন্নভাবে তদন্তের এক পর্যায়ে তার ছেলে কে সন্দেহ করি আমরা। তারপর কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে।