খন্দকার শাহিন,নরসিংদী প্রতিদিন: চোখে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ২০১৩ সালের শেষের দিকে মরিশাসে পাড়ি জমিয়েছিল নরসিংদীর সদর উপজেলার চর্নগরদী এলাকার ২২ বছরের টগবগে যুবক জান্নাতুল ইসলাম নাঈম। কিন্তু বিধি বাম! ৪বছরের মাথায় বাক্সবন্দি লাশ হয়ে ফিরলো সে। শনিবার ভোর পৌনে ৬ টায় এমিরেটস এর একটি ফ্লাইটে করে তার মরদেহ দেশে এসে পৌঁছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী মরিশাসে সে এক হত্যাকান্ডের শিকার হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাঈম পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসের “ডেনিম ড্যালিল লিমিটেড” নামে এক কোম্পানীতে কাজ করতো। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী কর্মস্থল থেকে ফিরে সে নিখোঁজ হয়। ৩দিন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ না পেয়ে তার সহকর্মীরা তার বাবা-মায়ের কাছে খবর পাঠান। পরে তাদের অনুরোধে থানায় ডায়েরী করেন তার সহকর্মীরা। দেশ থেকে পরিবারের অনবরত চাপে ২০ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সন্দেহভাজন হিসেবে নাঈমের রুমমেট মামুন (২৬) নামে এক যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারী বুধবার সেখানকার এক জঙ্গল থেকে গলায় রশি পেঁচানো ও কাদামাখানো নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নাঈমের পরিবার আরো জানায় মামুন ও নাঈম একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো এবং একই সাথে থাকতো। নাঈমের আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে দেশে আসার পরিকল্পনা ছিলো। তাই দেশে টাকা না পাঠিয়ে সে সঞ্চয় করছিলো। আর এসব কিছুই মামুন জানতো। টাকা আত্মসাতের জন্যেই নাঈমকে খুন করা হতে পারে বলে পরিবারের ধারণা।
কিন্তু এতদসত্বেও নাঈমের কর্মরত ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ গা বাঁচানোর জন্য ঘটনাটিকে অপমৃত্যু সাজিয়ে তার লাশ দেশে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে সন্দেহভাজন মামুনকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। সন্দেহভাজন মামুনের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ধনারচর গ্রামে। তার বাবার নাম তোফাজ্জল মিয়া। এদিকে এ ঘটনা জানার পর থেকে নাঈমের বাড়ি চর্নগরদীর রাজারদী গ্রামে শুরু হয় শোকের মাতম। তার বাবা শফি উদ্দীন খন্দকার ও মা হেলেনা বেগমসহ ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনরা তার শোকে পাগলপ্রায়। প্রতিদিনই নাঈমের খবর নিতে তাদের বাড়িতে শত শত লোক ভীড় করে। অবশেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা সোয়া দশটায় নাঈমের লাশ বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারনা ঘটে। পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। নাঈমের বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গলায় রশি দিয়ে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের সময় ছবিতে তার পা মাটিতে লাগানো দেখা যায়। আমি এ হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই।
একইদিন বেলা সাড়ে দশটায় তাদের বাড়ির পাশে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।