মো. আল-আমিন সরকার, নরসিংদী প্রতিদিন:
দুর্জয়, আরিফ, আনাস, অমিত, রাফিদ, প্রিতম ও শাওন মাধবদীর ৭ প্রতিভাবান কিশোর। সবাই মাধবদী এস পি ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। স্কুল ছুটির পর অবসর সময়ে নিতান্তই ব্যাট-বল হাতে যাদের মাঠে পড়ে থাকা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে হই-হুল্লোড়ে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সেই তারা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাংলাদেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা ও খাদ্য নিশ্চিতের ভাবনায় বিভোর। আর এ ভাবনা থেকেই তারা আবিষ্কার করেছে ভূমিকম্পে আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র।
এছাড়াও তাদের আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে জিএম (এগ) ফসল, টাচ প্যাড, কার্বন নিঃসরণ যন্ত্র ইত্যাদি। তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে ভূমিকম্পের সতর্কতার পাশাপাশি এর মাত্রাও জানা সম্ভব বলে জানায় ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের টিম লিডার দুর্জয়। এর কৌশলের অংশবিশেষ হিসেবে
দুর্জয় জানায়, ভূমিকম্পের গতির চেয়ে বৈদ্যুতিক গতি অনেক গুণ বেশি হয়ে থাকে। “প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব” অনুযায়ী আমাদের গোটা স্থলভাগ কয়েকটি প্লেটের উপর বিন্যস্ত। ভূমিকম্পের সময় এর উৎপত্তিস্থলের প্লেটটি কাঁপতে থাকে। এ কম্পন ভূ-গর্ভে রাখা তাদের যন্ত্রের সেন্সরকে আন্দোলিত করে। সেখান থেকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে এ কম্পন সংকেত তাদের যন্ত্রের সতর্কীকরণ এলার্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
দুর্জয় আরো জানায়, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্ব মুহূর্তের প্রতিটি সেকেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে তার যন্ত্রটি ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পূর্বেই সতর্ক সংকেত পাঠায়। তাই আগাম সংকেতের ফলে নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে ভূ-গর্ভে রাখা সেন্সর স্থাপনের গভীরতা বাড়িয়ে আরো আগেও সংকেত পাওয়া সম্ভব বলে তারা জানায়।
ইতিমধ্যেই তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি নরসিংদী জেলাসহ বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ তারা আন্তঃস্কুল থেকে শুরু করে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ভূমিকম্পে আগাম সতর্কীকরণ যন্ত্র ছাড়াও তাদের আরো উল্লেখযোগ্য সফলতা রয়েছে। পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়ই তাদের রয়েছে সরব বিচরণ। অল্পসময়ে ফসল ফলানোর তাদের আরো একটি সফল প্রজেক্টের নাম জিএম (এগ) ফসল বা এবহবঃরপধষ গড়ফরভরবফ ঈৎড়ঢ়ং। এটি একটি জীনগত কৌশল। যার মাধ্যমে আড়াই-তিন মাসে ফলন দানকারী গাছ থেকে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব বলে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের দাবি।
তারা জানায়, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ফুলের মধ্যে এই কৌশল প্রয়োগ করে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া গেছে। টিমের সদস্য আরিফ ও রাফিদ জানায়, তাদের আবিষ্কৃত অন্যান্য যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে টাচ প্যাড যা মানুষের শরীর থেকে ঋণাত্মক চার্জ গ্রহণ করে আলো জ্বালাতে সক্ষম। এছাড়াও রয়েছে কার্বন নিঃসরণ যন্ত্র। যা ব্যাপকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী প্রজেক্ট; যেমন ইটের ভাটায় ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইডকে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য পদার্থে পরিণত করা সম্ভব। দুর্জয় মাধবদী এস.পি ইনস্টিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তার পুরো নাম দুর্জয় সাহা দীপ্ত। তার বাড়ি মাধবদী শহরের কাশিপুরে। তার পিতার নাম দেবাশীষ সাহা। তারা দুই ভাই, দুর্জয় সাহা ও দীপ্ত সাহা। এর মধ্যে সে বড়। বাকিরা সবাই একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র। তাদের সবার বাড়িই মাধবদীতে। অল্প বয়সে তাদের এমন আবিষ্কারে স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক ও অন্য শিক্ষার্থীরাও খুবই খুশি।
মাধবদী এস.পি ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু কিরণ কুমার দেবনাথ বলেন, তাদের এ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতিষ্ঠান সহ মাধবদী তথা গোটা দেশের জন্য সুনামের। আমি তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। তারা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ পেলে জীবনে অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানের গৌরব। তারা এই স্কুলের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যেমনিভাবে সুনাম বয়ে এনেছে তেমনি ভাবে গোটা বিশ্বের বুকে একদিন বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।