নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,০২ মার্চ,শুক্রবার ২০১৮:
সংসারের অভাব ঘুঁচানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় নিয়েছিলেন কাউছার। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পিতা-মাতার আদর আর স্ত্রী-সন্তানের মায়া ত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। কিন্তু কে জানত- ভাগ্য বদলাতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে ফিরবেন তিনি।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বারান্দার মেঝেতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করছেন তার স্বজনা। আশেপাশের মহিলারা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বৃথা সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি চলে যাওয়ায় অসহায় এখন পুরো পরিবারটি।
নিহত কাউছারের অবুঝ মেয়ে রোকেয়া (৭) বাবার মৃত্যুর শোকে পাথর। দুই ভাইয়ের মধ্যে কাউছার ছোট।
পিতা-মাতা বেঁচে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালে কাউছার অভাবের সংসারে হাল ধরতে চলে যান মালয়েশিয়ায়। সেখানে থাকা অবস্থায় পিতা-মাতাকে হারান তিনি। দরিদ্র পরিবারে দুই ভাইয়ের উপার্জনেই চলতো তাদের সংসার।
মাঝে ছুটিতে এসে করিমগঞ্জ গ্রামের ফেলু মিয়ার মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে করেন কাউছার। সংসার জীবনে তাদের কোলজুড়ে আসে মেয়ে রোকেয়া (৭)। সে স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে পড়ে।
শোকে বিহ্বল কাউছারের স্ত্রী তানিয়া বলেন, গত সপ্তাহে স্বামীর সাথে শেষ কথা হয় তার। ফোন করেই মেয়ের কথা জানতে চায়। মেয়ের প্রতি ছিল তার অসীম ভালোবাসা। কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তে মেয়েকে না দেখেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আর নিহত কাউছারের অবুঝ শিশু সন্তান বুঝতেই পারছে না তাদের বাবা আর ফিরবেন না।
জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় বিল্ডিংয়ে কাজ করার সময় ছাদ থেকে পা ফসকে পড়ে মারা যান কাউছার। আজ বাংলাদেশের একটি বিমানে নিহত কাউছারের লাশ দেশে আসে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণ করেন তার স্বজনরা। বিকাল ৩টায় গ্রামের বাড়িতে তার লাশ নিয়ে এলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাকে দেখার জন্য ভিড় জমান প্রতিবেশীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ। বিকাল ৫টায় হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে কাউছারকে দাফন করা হয়।