প্রকাশিত ডেস্ক*
নরসিংদী প্রতিদিন,বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল ২০১৮:
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রায়পুরা উপজেলা দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি।
ক্ষমতাসীন দলে শক্তিশালী একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে তেমনটি নেই। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকই যেন বিএনপি প্রার্থীর একমাত্র ভরসা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নবীন-প্রবীণ চার নেতা। এ দলে রাজুর ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুও রয়েছেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির দুই কেন্দ্রীয় নেতাও মাঠে সক্রিয় আছেন।
আওয়ামী লীগ : রায়পুরার এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন টানা পাঁচবার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হন। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিও তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু নরসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে বিতর্কে জড়িয়ে ছিটকে পড়েন জেলা রাজনীতি থেকে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজুর অসুস্থতার সুযোগ ও ভাইয়ের উত্তরাধিকার সূত্রকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন লাভের চেষ্টায় মাঠে আছেন তাঁরই ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে সক্রিয় আছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবির কাউসার, বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সামছুল হক ও ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান।
সংসদ সদস্য প্রবীণ নেতা রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রায়পুরার মানুষ আমাকে নেতা নয়, অভিভাবক মনে করে। আমিও তাদের ছায়া দিয়ে দীর্ঘদিন আগলে রেখেছি। যত দিন বেঁচে থাকব এ এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মাঝেই বেঁচে থাকব। রায়পুরাবাসী আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। পাঁচবার আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়ে তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য সংসদে পাঠিয়েছে। আমার এ জীবনে আর চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। বাকি দিনগুলোতেও তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরতে চাই। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এবারও নির্বাচনে অংশ নিয়ে নৌকার বিজয় অটুট রাখব। ’
সংসদ সদস্যের ছোট ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন, ‘আমার ভাই রাজু রাজনীতি করে রায়পুরার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেছেন। আমিও ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে তাঁর সঙ্গেই থেকে রায়পুরাবাসীর জন্য কাজ করে গেছি। এখন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সরাসরি আমার নেতৃত্বে সংগঠিত হতে চায়। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। ’
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রাজু ভাই আমাদের আদর্শ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা চড়াই-উতরাই উপেক্ষা করে রায়পুরা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছেন। সব রাজনীতিবিদই চান জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা করতে। আমিও চাই। বাকিটা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। আর তিনি যাঁকেই নৌকা মনোনয়ন দেবেন আমি তাঁর পক্ষেই কাজ করব। আমি নৌকা মার্কা চিনি, কোনো ব্যক্তি না। ’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবির কাউসার বলেন, ‘রায়পুরায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অনেক শক্তিশালী। তবে দলে এরই মধ্যে একটি সুবিধাবাদী অংশও গড়ে উঠেছে। তারা রাজু ভাইকে মাঝেমধ্যে মিসগাইড করে। যার কারণে দলের অভ্যন্তরে সমস্যা তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী কাজপাগল মানুষ। যারা কাজ করে তিনি তাদের মূল্যায়ন করেন। আমিও সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি রায়পুরার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাকিটা প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করবেন। ইতিমধ্যে রায়পুরাবাসীর অনেক সাড়া পাচ্ছি। ’
মোহাম্মদ সামছুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে রাজু ভাই স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন। ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাজু ভাইকে বর্জন করেছে। তাই তৃণমূল চায় আমি দলের মনোনয়ন নিয়ে এসে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করি। পাশাপাশি রায়পুরার প্রধান সমস্যা টেঁটা সংঘর্ষ বন্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। ’
বিএনপি : নরসিংদী-৫ আসনে বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আলী মৃধার ব্যর্থতার সুযোগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পান নতুন মুখ প্রবাসী ও ব্যবসায়ী জামাল আহমেদ চৌধুরী। নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারলেও ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে জামাল আহমেদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে দলের সমালোচনা ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। দুই বছর আগে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এ কে নেছার উদ্দিনকে সভাপতি ও আবদুর রহমান খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে কিছুটা প্রাণ ফিরে এসেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের উপজেলা শাখার সভাপতি এ কে নেছার উদ্দিন। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনিও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় প্রচার ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের রায়পুরায় ২৪টি ইউনিয়ন। তৃণমূলের সব নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিতে আমরা মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করব। সেটা আমি হই আর নেছার ভাই হোক। তৃণমূল যাঁকে সমর্থন দেবে আমরা তাঁর পক্ষেই কাজ করব। ’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি নেছার উদ্দিন বলেন, ‘তৃণমূলের সব নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে। কারণ এই স্বৈরাচারী সরকারের আমলে আমার নেতাকর্মীদের মামলা-হামলায়, সর্বোপরি দুঃসময়ে আমি সব সময় পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আশা করছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেবেন। এখানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার মতো আমি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নেই। ’
তবে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির কমিটি ও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে কমিটি দুর্বল নয়। ক্ষমতাসীন দলের মামলা-হামলার কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতি সবখানেই কিছুটা দুর্বল। তবে আগামী দিনে দলের বিজয় নিশ্চিত করার মতো প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। ’
জাতীয় পার্টি : জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হেনা খান পন্নী বলেন, ‘রায়পুরা আমার পূর্বপুরুষের জন্মভূমি হওয়ায় এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে চাই। সব ধর্মীয় ও সুধী সমাবেশে আমার বিচরণ রয়েছে। জাতীয় পার্টিকে আগামী দিনে সংগঠিত করে রায়পুরায় লাঙলের ঘাঁটি বানাতে চাই। পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রায়পুরায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এলাকার মানুষ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি দলকে বিজয়ী করব। ’
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘রায়পুরার মাটি লাঙলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ এলাকায় জাতীয় পার্টির শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাই। মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। ’
সূত্র: কালের কণ্ঠ/ মনিরুজ্জামান, নরসিংদী, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০