প্রকাশিত ডেস্ক*
নরসিংদী প্রতিদিন,সোমবার ০৯ এপ্রিল ২০১৮:
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন শাহবাগসহ সারা দেশে চলছে, সেখান থেকে দেশি-বিদেশি অসংখ্য গণমাধ্যম ছবি তুলেছে। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সহস্র ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দুটি ছবি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাতের অন্ধকারে ল্যামপোস্টের নিচে টিয়ার শেলের ধোঁয়ার মধ্যে বাংলাদেশের পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক দুঃসাহসিক তরুণ। ছবিটি তুলেছেন দৈনিক আমাদের সময়ের ফটো সাংবাদিক আলামিন লিওন। এই ছবিটি শেয়ার দিয়ে অনেকেই কোটা প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
মাহাবুবুর রহমান লিখেছেন, শুনুন, কোটাপন্থীদের বলছি। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের জন্য যা করেছে তা অতুলনীয়, অভুলনীয়। তারা মর্যাদা পাবেই, আমরাও দিতে বাধ্য থাকব। তারা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বলতে চাই, আপনার পিতা-মাতা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে, কিন্তু আপনি নন! আপনার আদর্শ আর আপনার পিতা-মাতার আদর্শ এক নয়! তাদের নাম বিক্রি করে খাওয়ার কোনো মানেই হয় না। আপনারা কোটার দাবি রাখতেই পারেন না।
তিনি বলেন, সরকার দিচ্ছে তাই পাচ্ছেন, ধরে রাখতে চাইছেন কোন বলে? আপনাদের বাবা-মা যুদ্ধ করেছে বলে? তাহলে তো বিনিময় চাইছেন? মুক্তিযুদ্ধতে তো কোনো লেনদেন ছিল না? মুক্তিযোদ্ধারা তো কোটা নিয়ে কথা বলে না? তাদের সন্তানদের কেন এত চাহিদা? আর কোটা আপনারা পাচ্ছেন কিন্তু তাই বলে সন্তান-নাতি-পুতি-নাতির নাতি-পুতির পুতি সবাইকে দিতে হবে কোটা? এই বিনিময়ের আশায় কোনো মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেনি! এতেই বোঝা যায় আপনাদের আদর্শ আর আপনাদের বাবা-মা এর আদর্শ তে ব্যাপক তফাত! তারা যেখানে জীবন দিতে ও কার্পণ্য করেননি সেখানে আপনার চাকরি পেতে কোটার নামে দুর্নীতি করছেন।
তিনি আরও বলেন, মনে রাখবেন, কোটা আপনার প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে, কিন্তু অধিকার নয়! আর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির তো কোনো অধিকার বা প্রাপ্যতার সুযোগ-ই নেই। এরপরে ও যদি আপনি চান, আপনি দুর্নীতি এর খাতায় নাম লেখালেন আর কিছু না!
মাহাবুবুর রহমানের ভাষায়, যেই ত্যাগ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের জন্য করেছে, তা অনস্বীকার্য। তাই বলে তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের অবদারের নাম ভাঙিয়ে মিস ইউজ করাও দেশবিরোধী। আর কত ছোট করবেন তাদের? তাদের নাম করে আর কত কোয়া নামের দান নেবেন? তাদের অবদানকে এভাবে খাটো করবেন না। এখন নতুন যুদ্ধ হলে আপনাদের পাওয়া ও যাবে না।
ছবিটি শেয়ার দিয়ে নাসির আহমেদ লিখেছেন, দুজন একই সঙ্গে লেখাপড়া করল। একজন মেধাবী, অন্যজন নকলবাজ। একজন ভালোভাবে, অন্যজন খারাপভাবে পাস করল। চাকরির জন্য পরীক্ষা দিল। দুজনেই ভাইভা দিতে গেল। মেধাবীজন রাজ্যের হতাশা নিয়ে বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল, ‘লেখাপড়া আজ মৌলিক বিষয় নয়, শুধুই পণ্ডশ্রম।’ নকলবাজটি কোটার জোরে চাকরি পেয়ে গেল। কারণ তার দাদা সাবেক রাজাকার, বর্তমানে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। জয় বাংলা।
সালমান তারেক শাকিল লিখেছেন, এই আন্দোলনে সাধারণ দেখলাম, পুলিশের শেল বা রাবার বুলেট অথবা বঙ্গবন্ধুর বুকে বড় হয়ে ওঠা মুক্তির দাবি। মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত দাবির পতাকা, ছাত্রলীগের প্রতিরোধ সন্ত্রাস, কতিপয় রিপোর্টারের মিথ্যা ভাষণ আর উৎকণ্ঠিত বাংলাদেশ। এই প্রতিরোধে আলো আসুক অন্তত ছেলেমেয়েদের ভাগ্যে।
বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুজ্জামান লাবু ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করে সেখানে সাংবাদিকদের মানবিকতা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার এই ছবিটি বহু সাংবাদিক শেয়ার করেছেন নিজেদের মতো।
নুরুজ্জামান লাবু লিখেছেন, মাঠেঘাটে ক্রাইম রিপোর্টাররা যেমন পুলিশের মার খায় বা অসহযোগিতার শিকার হয়, আবার পুলিশের বিশেষ মুহূর্তে ক্রাইম রিপোর্টাররাই এগিয়ে আসে। আমরা মিলেমিশে কাজ করি। এই বন্ধন দৃঢ় হোক। পেশাগত কাজের বাইরেও যেন আমরা সহযোগিতার মনোভাবাপন্ন হই।
ছবির ক্যাপশনে লাবু লিখেছেন, ছবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মারধরের হাত থেকে এক পুলিশ সদস্যকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুই ক্রাইম রিপোর্টার মুক্তাদির রশীদ রোমিও আর জসিম উদ্দিন মাহির।
সূত্র: যুগান্তর, ০৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৩৮ | ছবি: আলামিন লিওন। অনলাইন সংস্করণ