নিউজ ডেস্ক,বুধবার,১১ এপ্রিল ২০১৮: জন্মের পর মৃত কন্যা শিশুকে আইসিইউতে রেখে আড়াই লাখ টাকা বিল করে রাজধানীর ধানমন্ডির স্কয়ার হাসপাতাল। গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ভুক্তভোগী পরিবার থেকে ওই বিল না নেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্কয়ারের এই বিল মওকুফের প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয় ভুক্তভোগী পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুর আড়ারটার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে। টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিল নিবেন না বলে ঘোষণা দিলে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় পরিবারটি।
আলোচনায় উপস্থিত একজন নাম প্রকাশ না শর্তে ব্রেকিংনিউজকে জানান, দুপুর দুই টায় স্কয়ার হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে শুরু হয় আলোচনা। এসময় হাসপাতালের সিইও ইউসুফ সিদ্দিক, মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক নওশাদ আহমেদ, বাণিজ্যিক বিভাগের ব্যবস্থাপক মিনহাজ ইসলাম, মার্কেটিং প্রধান ডা. ফয়সাল, ডাক্তারদের প্রধান নাজিম উদ্দিন, হেড অব ম্যানেজমেন্ট রুহুল আলম, গাইনি বিশেষজ্ঞ রেহনুমা জাহান ছাড়াও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা চলার সময় বেশ কয়েকবার বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে।
এসময় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, তাদের গাফলতির কারণে তাদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে সেটা গণমাধ্যমের সামনে বলতে হবে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে সেই রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত তিন ডাক্তারকে সকল কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এছাড়াও আইসিউতে রেখে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি বন্ধ হয়, সেই বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
তবে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটির বিষয়টি ছাড়া অন্য কোন দাবি মানতে রাজি হয়নি বলে জানা গেছে। আর কবে নাগাদ তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে সেই বিষয়টি সভায় নিশ্চিত করা হয়নি বলেও জানা গেছে। এসময় হাসপাতালের কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবারকে বলেন তারা যেন সংবাদমাধ্যমে তথ্য ও ফেসবুকে আর কোন তথ্য প্রচার না করেন।
এদিকে আলোচনা শেষে সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা মৃত নবজাতকের মা তাসলিমা তারানুম নোভাকে দেখতে গিয়ে পরিবারটিকে সান্তনা দেন। ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে নোভার স্বামী ও আত্মীয়দের ডেকে নিয়ে নার্সদের স্টেশন রুমে যান।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিল হয়েছে আড়াই লাখের মতো সেটা দেওয়া লাগবে না। আজ আপনার রিলিজ করে দিচ্ছি, বাড়ি চলে যান। এসময় ভুক্তভোগী পরিবার জানান, তারা বিল দিয়েই হাসপাতাল ছাড়বেন। তখন হাসপাতালের ওই কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে পরিবারটিকে বোঝানোর চেষ্টা করে।’
প্রসূতির মামা অবসরপ্রাপ্ত মেজর রেজা-উল-করিম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমরা টাকার চিন্তা কখনও করিনা। স্কয়ার হাসপাতালের মতো এতো বড় হাসপাতাল এ কাজ করতে পারে আমাদের ধারণা ছিলো না। আমার ভাগ্নির সাথে হাসপাতালের ডাক্তাররা খুবই খারাপ ব্যবহার করেছে। তারা বাচ্চাটিকে বাঁচতে দেয়নি’।
বিল না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন প্রস্তাব হাসপাতালের বেশ কয়েকজন আমাদের দিয়েছেন। তবে বিল পরিশোধ করে আমরা হাসপাতাল ছাড়বো।
প্রসূতির স্বামী শাহবুদ্দিন টিপু ব্রেকিংনিউজকে জানান, বৈঠকে আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি কিন্তু তারা তা মানেনি। আমার স্ত্রী এখনও অসুস্থ। সে সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায়। মাঝেমাঝে সন্তানের কথা ভেবে শুধু কান্না করছেন।
এ ব্যাপারে স্কয়ার হাসপাতালে ফোন করা করে ডা. রেহনুমা জাহানকে চাওয়া হলে একজন মহিলা ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘ডাক্তার এখন ব্যস্ত আছে, ফোন দেওয়া যাবে না। ওই মহিলার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনই ফোনের লাইন কেটে দেন।’
বিল মওকুফের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিকিৎসক মির্জা নাজিম উদ্দিনের নাম্বারে ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার তাসলিমা তারানুম নোভাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনেন তার স্বামী টিপু। সেখানে গাইনি বিশেষজ্ঞ রেহনুমা জাহান তাদের বেশ কয়েকটি চেক-আপ করিয়ে বলেন প্রসব ব্যাথা উঠলে হাসপাতালে আনতে। কিন্তু অন্য একজন চিকিৎসক এসে বলেন, এখনই তার স্ত্রীকে ভর্তি করাতে হবে।
সন্ধ্যায় স্ত্রীকে ভর্তির পর রাতে ডাক্তাররা নোভাকে প্রসব ব্যাথা উঠার ইনজেকশন দেয়। এতেও ব্যাথা উঠেনি। পরে শুক্রবার আবারও তাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরে ডা. রাফিফা ও ডা. নাজিয়া শনিবার নোভাকে অপারেশন থিয়েটারে নেন। সকালে বাচ্চা প্রসব করলেও তারা অপারেশ থিয়েটার থেকে তাকে বের করতে কালক্ষেপণ করে।