খন্দকার শাহিন,নরসিংদী প্রতিদিন,সোমবার,১৬ এপ্রিল ২০১৮: সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে পুড়ে নিহত রবিনের পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। প্রতিদিন লাশের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন হতভাগা ’বাবা’মা। রবিন মাধবদী থানার নুরালাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কাঠালিয়াস্থ আলগী কান্দাপার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। প্রায় ৬ লাখ টাকা ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি জমানো রবিনের স্বপ্ন ছিলো ঋণ পরিশোধ করে সংসারের অভাব দূর করা। একদিকে ছেলে হারানো অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
১৩ এপ্রিল শুক্রবার একটি ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আরও ৭ বাংলাদেশীসহ রবিনের মারা যাওয়ার খবর পান পরিবার। এরপর থেকে বিলাপ করতে করতে এখন শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। একদিকে ছেলে হারানোর বেদনা অন্যদিকে ঋন পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহত রবিনের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ছেলেটা আমাদের সুখী করতে গিয়ে চিরদু:খী করে দিলো। অভাবের সংসারে ঋনের বোঝা কিভাবে বইবো, ছেলের শোক কিভাবে সইবো? কিভাবে ঋন পরিশোধ আমার মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নাই।
মা রিনা বেগম বলেন, দুইদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা বলে কষ্টের বিবরণ শুনেছি। এরপরও চিন্তা ভাবনা না করতে আশ্বস্থ করেছিল, বলেছিল সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কান্না জরিত কণ্ঠে রবিনের স্বজন জাহাঙ্গীর বলেন,দ্রুত রবিনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন, অভাবগ্রস্ত পরিবারটির প্রতি ক্ষতিপূরণের বিষয় সদয় হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য: গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০ টা এবং সৌদি আরব সময় সকাল ৭.৩০ টায় সৌদী আরবের রাজধানী রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে পুড়ে আট বাংলাদেশী নিহত হয় ও সাত জন দগ্ধ হয়ে হয়। রিয়াদের দাখেল মদুদ এলাকায় এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা মারা যায়, তারা হলেন, ১. সোলেমান- যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। ২. সেলিম, বি-বাড়িয়া। ৩. জুবায়ের, সিলেট। ৪. মজিদ, রূপগঞ্জ, নারায়নগন্জ। ৫. হিমেল, কালিগঞ্জ, গাজীপুর। ৬. রবিন, মাদবদী, নরসিংদী। ৭. ইকবাল, কিশোরগঞ্জ। ৮. রাকিব, মানিকগঞ্জ। দগ্ধ সাত জন মধ্যে ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, ১. নাজমুল, মানিকগঞ্জ। ২. খোরশেদ শেখ, ঝিনাইদহ। ৩. পাবেল, পলাশ, নরসিংদী। ৪. নাজমুল, বগুড়া। ৫. সাইম, মানিকগঞ্জ।
এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সৌদিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা প্রহনের জন্য দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলার সারোয়ার আলমকে নির্দেশনা দেন।
এদিকে রিয়াদ সিভিল ডিফেন্সের মূখপাত্র মেজর মোহাম্মদ আল-হামাদির এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, শ্রমিকদের থাকার ওই ভবনের প্রবেশদ্বারে যখন আগুন লাগে তখন সেখানে ৪৫ জন ছিলেন। ওখানে মোট ৫৪ জন থাকতেন, যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি। ভেতরের দিকের কক্ষগুলো থেকে শ্রমিকদের বেরোনোর অন্য কোনো পথ ছিল না। নিহতদের অধিকাংশই ওই সব কক্ষের বাসিন্দা বলে সিভিল ডিফেন্সের এক ট্যুইটে বলা হয়।