প্রকাশিত ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,বৃহস্পতিবার,১৯ এপ্রিল ২০১৮: ‘গাতায় (গর্ত) পড়লে আর রক্ষা নাই। একটা না একটা কিছু হইবই। হয় স্প্রিং-বাতি, ওয়ান এক্সেল ভাঙ্গব, না হয় ইঞ্জিনে পানি ঢুইকা বন্ধ হইয়া যায়। পরে ঠ্যালা ছাড়া উপায় নাই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হইল গাড়ি ধইরা রাখা যায় না। মনে অয় এই বুঝি গাড়ি উল্টায়া যাইতাছে।’ সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শাহিন মিয়া নরসিংদীর হাতিরদিয়া-লাখপুর-দুলালপুর-শিবপুর সড়ক নিয়ে এভাবেই তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করছিলেন।
সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহূত হয় জেলার মনোহরদী, শিবপুর, পলাশ ও সদর উপজেলার বাইপাস সড়ক হিসেবে। নির্মাণের পর সম্প্রতি ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে সংস্কার করা হয়েছে সাড়ে ১০ কিলোমিটার। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় বাকি পাঁচ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ অংশের পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। সব সময় জমে থাকে পানি। ফলে যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাতিরদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকেই ১০০ মিটার সড়কের পিচ ওঠা শুরু। হাতিরদিয়া বাজার অংশ সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। সেখান থেকে এগোলেই শুরু দুর্ভোগের। হাতিরদিয়া ছাদত আলী উচ্চ বিদ্যালয় মোড় থেকে কুড়িপাইকা, কোচেরচর, নতুনবাজার, দৌলতপুর, কীর্তিবাসদী, হরিনারায়ণপুর, লাখপুর, শিমুলিয়া, পাতরদিয়া, গড়বাড়ি, দুলালপুর পর্যন্ত সড়কের পুরো অংশেই পিচ উঠে ও খোয়া সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সেই গর্তে পানি জমে কাদা-মাটিতে একাকার। হয়ে পড়েছে যান চলাচলের অনুপযোগী। ফলে এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী অর্ধলক্ষাধিক যাত্রীকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
হাতিরদিয়া থেকে নিয়মিত ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আসেন শফিউর রহমান রোকন। তিনি বলেন, ‘হাতিরদিয়া থেকে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আসতে আধাঘণ্টা সময়ের রাস্তা লাগে দুই ঘণ্টা। সকাল ৮টার অফিস ধরতে আমাকে প্রতিদিন সকাল ৬টা নয়তো তার আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। আবার রাস্তার মধ্যে বড় গর্তে পানি জমে থাকার কারণে তা আন্দাজ করা যায় না। কোনো কারণে মোটরসাইকেল সেই গর্তে পড়ে গেলে অফিস করা শেষ।’
লাখপুর-হাতিরদিয়া, লাখপুর-চরসিন্দুর, লাখপুর-শিবপুর সড়কের সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আবুল বাশার নাজির বলেন, ‘খানাখন্দের এই বেহাল সড়কে বাস, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ, ট্রলি, নসিমনসহ ছোট-বড় প্রায় দুই সহস্রাধিক যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে। ঘোড়াশাল ও পলাশ সার কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাসও যায় এই সড়ক দিয়ে।’ এসব যানে লক্ষাধিক লোক দৈনিক চলাচল করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে দুর্ভোগে পড়ছে যাত্রীরা, আর গচ্চা যাচ্ছে আমাদের মালিকদের। কারণ প্রতিদিনই কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছেই।’
এদিকে ইটাখোলা-শিবপুর-সিঅ্যান্ডবি-হাতিরদিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কারকাজ চললেও খুব ধীরগতির হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই সড়কে চলাচলকারী প্রায় কয়েক লাখ মানুষকে। ধুলাবালি এমনভাবে ওড়ে যে ১০ ফুট দূরে কোনো যান আছে কি না তা বোঝার উপায় নেই। এতে করে অনেক ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া নরসিংদী সদর উপজেলার সংগীতা মোড় থেকে ঘোড়াদিয়া স্কুল হয়ে শিবপুরের পুটিয়া বাজার, সাহেপ্রতাব মোড় থেকে পাঁচদোনা জিসি সড়ক, মনোহরদীর নারান্দী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সনমানিয়া ব্রিজ, উত্তর আলগী থেকে শাহাবউদ্দিন মেমোরিয়াল একাডেমি হয়ে একদুয়ারিয়া সড়ক, হাতিরদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে গঙ্গাজলী হয়ে বেলাব সংযোগ সড়ক, শিবপুরের কুমরাদি থেকে বন্যার বাজার সড়ক, বেলাব উপজেলার মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বেলাব বাজার পর্যন্ত সড়কগুলো একেবারেই বেহাল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হান সিদ্দিকী বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেহাল অনেক সড়ক সংস্কারের টেন্ডার হয়ে গেছে। আশা করছি ঠিকাদাররা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করবে। ’
সড়ক ও জনপথ নরসিংদী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা জোনের আওতায় শিবপুর-দুলালপুর-লাখপুর-হাতিরদিয়া সড়ক এবং শিবপুর-কামরাব-বেলাব সড়ক সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অতি অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হবে। আর ইটাখোলা-মটখলা সড়কের সংস্কারকাজের উড়ন্ত বালু নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত পানি দিচ্ছি।’
প্রকাশ/কালের কণ্ঠ,মনিরুজ্জামান, নরসিংদী,১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০