নিজস্ব প্রতিবেদক★
নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,০৪ মে ২০১৮:
নরসিংদীর শিবপুরের খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিকে অসহযোগিতা, আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া, স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন, নিয়মিত সভা না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. বাদল মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত এসব অভিযোগ করেছেন। প্রধান শিক্ষক মো. ফাসাদ মিয়া উপজেলার যোশর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবপুরের বাঘাব ইউনিয়নের খৈনকুট এলাকায় ১৯৭৭ সালে মুজিবুর রহমান খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি ভালোভাবে পরিচালিত হয়ে এলেও ১০ বছর ধরে সভাপতি, পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতার কারণে অনেকটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বাদল মিয়া বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিধি মোতাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসতে চাইলেও প্রধান শিক্ষক মো. ফাসাদ মিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা ও অসহযোগিতার কারণে তা ব্যাহত হয়। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক সব খরচ নিজ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত করেন।
তিনি পরিচালনা কমিটির অনুমতি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য খণ্ডকালীন শিক্ষক ও স্থায়ীভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। গত মার্চ মাসে পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে বিদ্যালয়ের টাকা তুলেছেন বলেও অভিযোগে ওঠে। এসব ঘটনাসহ দায়িত্ব গ্রহণের ১৭ মাসেও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সম্প্রতি সভাপতি বাদল মিয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গত ৭ এপ্রিল স্থানীয়দের সহযোগিতায় এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানালে প্রধান শিক্ষক প্রকাশ্যে সভাপতিকে হাত-পা ভেঙে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় সভাপতি সম্প্রতি নিজের নিরাপত্তা চেয়ে শিবপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এসব ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মজিবুর রহমান খৈনকুটি ও এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে পরিচালনা কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয় করতে আজ শুক্রবার সকালে একটি সভা ডেকেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মজিবুর রহমান খৈনকুটি বলেন, ‘নিজের তৈরি করা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি দিনে দিনে অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে দেখে আর সহ্য হচ্ছে না। গত ১০ বছরেও প্রধান শিক্ষক ও একটি পরিচালনা কমিটির মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমার তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না। ’
পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. বাদল মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক যোশর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তাঁর অনেক প্রভাব। ১৭ মাস ধরে শুধু নামেই বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়ে আছি। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ের স্বার্থেই আমি তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো ইউএনও, শিক্ষা অফিসারসহ সবার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ আমি তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে অসহায়। ’
প্রধান শিক্ষক মো. ফাসাদ মিয়া বলেন, ‘সভাপতির অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এসব বিষয় নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার (আজ) স্কুলে মিটিং আছে। সেখানে সব জানতে পারবেন। ’
স্থানীয় সামাজিক শিক্ষা সেবা ও উন্নয়নমূলক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও অসহযোগিতার কারণে স্কুলটির আজ দৈন্যদশা। এর আগে উনার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ছয় বছর স্কুল থেকে অব্যাহতি দিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে মুচলেকা দিয়ে পুনর্বহাল হয়েছেন; কিন্তু তাঁর দুর্নীতি কমেনি। ’
শিবপুরের ইউএনও শীলু রায় বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’
প্রকাশিত ডেস্ক,কালের কণ্ঠ,মনিরুজ্জামান,নরসিংদী ৪ মে, ২০১৮ ০০:০০: