প্রকাশিত ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,১১ মে ২০১৮: নরসিংদী শহর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মেহেদী হাসান রিপন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় সম্প্রতি নরসিংদী পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে তিনজন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বাহেরচরের মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান। তাঁর নাতি মোজাম্মেল হোসেনকে জজ কোর্টে পেশকার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন মেহেদী। তিনি তাঁর বাবা আবদুল মান্নান ও বোন হেলেনা বেগমের মাধ্যমে আট লাখ টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পর দুই বছর পার হয়ে গেলেও চাকরি দিতে পারেননি। পাশাপাশি টাকাও ফেরত দেননি। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের সুপারিশ করা একটি অভিযোগপত্র নরসিংদী পুলিশ সুপারের কাছে দাখিল করেন।
মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কনস্টেবল মেহেদী নাতির চাকরির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এখন টাকা চাইলে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে মেহেদী লোহাজুরীর রিনা বেগমকে তাঁর ছেলে মো. আলাউদ্দিন শফিককে পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পরিদর্শকের পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। তিনি তাঁর বাবা আবদুল মান্নান ও বোন হেলেনা বেগমের মাধ্যমে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সাত লাখ ২৫ হাজার টাকা নেন। এরপর প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেলেও চাকরি দিতে পারেননি। টাকাও ফেরত দেননি।
রিনা বেগম বলেন, ‘স্বামী মাঈন উদ্দিন প্যারালিসিসের রোগী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী। খুব কষ্ট কইরা সংসার চলে। ছেলের চাকরির কথা চিন্তা কইরা সব বিক্রি কইরা মেহেদীরে সাত লাখ ২৫ হাজার টাকা দিছি। এহন টাকা দিব তো দূরের কথা, টাকা চাইলে মাইরা ফেলার হুমকি দেয়। ’
অন্যদিকে মেহেদী রায়পুরা উপজেলার মরজালের মো. তৌফিক মিয়াকে তাঁর মেয়ের জামাই মামুনের রেলওয়ে পুলিশে (জিআরপি) চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। সাড়ে ১১ লাখ টাকা লেনদেনের মৌখিক চুক্তি হয়। মেহেদী ভুক্তভোগীর ফুফাতো বোনের জামাই। তৌফিক পেশায় একজন অটোরিকশাচালক।
গত ১১ মার্চ তৌফিকের বাড়ি গিয়ে স্ত্রী রোজিনার হাত থেকে পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক নেন মেহেদী। ১৮ মার্চ জনতা ব্যাংকের স্থানীয় যোশর বাজার শাখায় ভাই আলামিন ও স্ত্রী রোজিনা বেগমের সামনে তৌফিকের কাছ থেকে মেহেদী নগদ পাঁচ লাখ টাকা নেয়। এরপর চুক্তির বাকি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মিষ্টি খাওয়া বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য তৌফিককে চাপ দেন মেহেদী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ এপ্রিল রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাসস্ট্যান্ডে বুইদ্ধার মিষ্টির দোকানে তৌফিকের কাছ থেকে বাকি টাকা নিতে যান মেহেদী।
এ সময় রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক কামাল ও দুজন কনস্টেবল সাদা পোশাকে একটি অটোরিকশা নিয়ে মিষ্টির দোকানে আসেন। তাঁরা তৌফিকের এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়। এরই মধ্যে তৌফিকের স্ত্রী রোজিনার মোবাইল ফোনে কল করে মেহেদী বলেন, ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক আদায়ের চেষ্টা না করার জন্য। যদি চেষ্টা করা হয় তাহলে তৌফিককে আরো বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হবে।
গত ১০ এপ্রিল তৌফিক আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পেয়ে পরদিন রায়পুরা থানার এসআই কামালের কাছে যান। তিনি গ্রেপ্তারের সময় ছিনিয়ে নেওয়া দুটি মোবাইল ও জাতীয় পরিচয়পত্র ফিরিয়ে দেন। টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে দুজন কনস্টেবলকে দেখিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই সময় কনস্টেবলরা ৯ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ‘সব টাকা বুঝিয়া পাইলাম’ মর্মে জোর করে লিখিত জবানবন্দি রেখে থানা থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তৌফিক বাকি টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ১৬ এপ্রিল এসপির কাছে একটি অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী মো. তৌফিক মিয়া বলেন, ‘অভিযোগ দায়েরের পর আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় আমিসহ অন্য ভুক্তভোগীদের ডেকে পাঠান এসপি। তিনি আমাদের সামনে মেহেদীকে বলেন, জেলে যেতে না চাইলে সবার টাকা ফেরত দিয়ে দিতে। আর তিনি সব খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়ে আমাদের চলে যেতে বলেন। ’ কনস্টেবল মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বলার জন্য কল করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে নরসিংদী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
নরসিংদীর এসপি সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগী সবার অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ’
সূত্র: কালের কণ্ঠ,মনিরুজ্জামান, নরসিংদী,১১ মে, ২০১৮ ০০:০০: