নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন, সোমবার, ২৮ মে ২০১৮: অভিযোগ হলো, ছাত্রলীগ আর আগের ছাত্রলীগ নেই। এর মধ্যে শিবির এবং ছাত্রদলের অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছে। শিবির-ছাত্রদল ঠেকাতে চলছে চিরুনি অভিযান, ঠিকুজি খোঁজা হচ্ছে প্রস্তাবিত নেতাদের। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগে আদর্শ বিবর্জিতদের অনুপ্রবেশ কি একটি নতুন প্রবণতা? নাকি ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার এ এক কৌশল?
এক গবেষণায় দেখা যায়, এটি বহু পুরোনো ধারা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ২৭টি কমিটি হয়েছে। ২৭ জন সভাপতির ৫ জনই এখন বিএনপির নেতা। ২৭ জন সাধারণ সম্পাদকের ৩ জন এখন বিএনপির রাজনীতির নীতি নির্ধারক। অথচ আওয়ামী লীগ আর বিএনপির আদর্শ দুই মেরুতে।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। শাহ মোয়াজ্জেম যে কমিটির সভাপতি তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি। সভাপতি হবার আগে শাহ মোয়াজ্জেম ১৯৫৭-৬০ সালে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। শাহ মোয়াজ্জেম বাংলাদেশ ডিগবাজির রাজনীতির অন্যতম বিজ্ঞাপন।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার রক্তের উপর দিয়ে তিনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। ৮২’তে ডিগবাজি দিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এসময় ‘দুর্গন্ধময়’ কথার জন্য তিনি ছিলেন আলোচিত। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৬৩ সাল থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ওবায়দুর রহমান পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব হন। বিএনপিতেও এক সময় তাঁর জায়গা হয়নি।
১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। কোরেশী যে সময় ছাত্রলীগের সভাপতি তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক। ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীও বিএনপির নেতা হয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনে সেনা সমর্থিত কিংস পার্টি করে আলোচিত হন। এখন একটি প্যাড সর্বস্ব দলের নেতা তিনি। ১৯৭০-৭২ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাজাহান সিরাজ। অবশ্য ৭২-এ তিনি জাসদে যোগ দেন। বর্তমানে অসুস্থ এই নেতা এখনো বিএনপিতে আছেন।
১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। এই সময় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শফিউল আলম প্রধান। মনিরুল অনেক ঘাটের পানি খেয়ে এরশাদের জাপা থেকে বিএনপিতে এসে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। আর শফিউল আলম প্রধান তো বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার এক মাইক্রোফোন। একটা নাম সর্বস্ব দল করে বিএনপির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন নিজেকে।
৮৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন হাবিবুর রহমান হাবিব। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি আলোচিত হন। ৯১-এর নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়েই তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এখন বিএনপির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।