ধর্ম প্রতিদিন | নরসিংদী প্রতিদিন-
মঙ্গলবার,২২ জানুয়ারি ২০১৯:
অথর্ববেদের (২০/৯/৩১/১-১৪) এর কুন্তপ সুক্তির ৪,৫ ও ৬ নং শ্লোক।
৪নং শ্লোক-
বচ্যম্ব রেভ বচ্যম্ব বৃক্ষে ন পক্কে শকুনঃ
নষ্টে জিহবা র্চ্চরীতি ক্ষুরো ন ভূরিজোরিব
অর্থ- সত্য বিস্তার করো রেভ সত্য বিস্তার কর
পক্ষি যত গায় শুষ্ক বৃক্ষের উপর।
কাচি ধারালো দুই ফলকের মত,
ঠোট ও জিহ্বা তোমার হোক স্পন্দিত।
অর্থাৎ কুন্তপসুক্তের চতুর্থ শ্লোকে “রেভ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃত “রেভ” শব্দটির অর্থ প্রশংসাকারী, যার আরবী প্রতিশব্দ আহাম্মদ। এ শ্লোকে আহাম্মদকে সত্য প্রকাশ করার অনুরোধ কর হয়েছে। পাকা ফল বিশিষ্ট একটি গাছের ডালের উপর বসে পাখি যেমন আনন্দে গান করে তেমনি “রেভ” বা আহাম্মদকে নির্ভিকভাবে আল্লাহর বাণী মানুষের মাঝে প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে।
৫নং শ্লোক-
প্র রেভাসো মণীষা বৃক্ষাগাব
অমোত পুত্রকা এষামমোত গা ইতেবরতে
অর্থ- শিকারী দেখিয়া যেমন শিকারগণ
বলশালী বৃক্ষবৎ করে পলায়ন।
গৃহেতে থাকে তাদের কেবল বৎসগণ,
অপেক্ষা করে থাকে গাভীদের কারণ।
আরও পড়ুন : বৈদিক ধর্ম ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) (তৃতীয় পর্ব)
অর্থাৎ মক্কা অভিযানের সময়ে সাহাবীদের পরিবার পরিজনের উদ্বেগের বিষয়টি এ শ্লোকে প্রকাশিত হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবীগণ যখন মদীনা ত্যাগ করে মক্কা অভিযানে বাহির হন, তাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তাদের গৃহে প্রত্যাবর্তনের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। বাড়ীতে বেধে রাখা দুধের বাছুর যেমন মা গাভীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তেমনি মদীনায় অবস্থানরত সাহাবীদের স্ত্রী সন্তানেরা মক্কা অভিযানরত তাদের পিতা/স্বামীর গৃহে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকেন।
৬নং শ্লোক-
প্ররেভ ধীং ভরস্ব গোবিন্দং বসুবিদম
দেবত্রেসাং বাচং শ্রীণীহীষুর্নাবীরস্তারম
অর্থ- হে রেভ! প্রভুকে প্রার্থনা করে যারা
দৃঢ়ভাবে প্রজ্ঞাকে ধারণ করে তারা
ইহাতে উৎপন্ন উৎকৃষ্ট বস্তু গাভীগণ
পাইবে সততা ইহা প্রার্থনা কারণ
বিলাইয়া দাও ইহা দেবতাদের স্থানে
তীরন্দাজ যথা শর নিক্ষেপ ঠিক স্থানে।
অর্থাৎ রেভ বা আহম্মদকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। এখানে আরও বলা হয়,
যারা একশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে তারা প্রকৃত জ্ঞানী। প্রর্থনার ফলস্বরূপ এসব জ্ঞানী আল্লাহর
কাছ থেকে পুণ্য লাভ করবেন।
৭নং শ্লোক-
রাজ্ঞো বিশ্বজনীনস্য যো দেবোহমর্ত্যা অতি
বৈশ্বাররস্য সুষ্ঠুতিমা সুনোতো পরিক্ষিতঃ
অর্থ- পার্থিব রাজার কর স্তুতি জয়গান
মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ তিনি দেব হন
সকল জনের তিনি হন পরিচালক
সকলের হন তিনি আশ্রয়দায়ক
অর্থাৎ, তিনি তো পৃথিবীর সম্রাট ও দেবতা, সর্বোত্তম মানব, সমস্ত মানবতার দিশারী, সকল জাতির নিকট সুপরিচিত। তাঁর সর্বোচ্চ প্রশংসার গুণগান কর, এ শ্লোকে রেভ বা আহম্মদ (সা.) কে রাজসিংহাসনের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি শত্রু-মিত্র সকলকে আশ্রয় দান করেন, সকলের কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন। ( বৈদিম ধর্ম ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)- ৩৫০-৩৫২ পৃঃ)।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, ইমাম ও খতীব।