লক্ষন বর্মন। নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯:
নরসিংদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামকে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা ময়লা ও চেয়ার ছুড়ে হামলা করেছে । আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁর নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় এই ঘটনা ঘটে। মাথায় টুপি ও মুখোশ পড়া ৫/৬ জন দুর্বৃত্ত অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে এই হামলা চালায়। অধ্যক্ষ বলছেন, তাকে ভয় দেখাতেই এমন নোংড়া হামলা করা হয়েছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের অভিযোগে বলেছে, নিজ কক্ষে কর্মরত অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে মাথায় টুপি ও মুখোশ পড়া ৫/৬ জন দুর্বৃত্ব হঠাৎ করে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে। প্রবেশের পরেই তারা বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করতে শুরু করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে উদ্দেশ্য করে একটি লাল বালতিতে করে গোবর ও ময়লা ছুঁড়ে মারে। দুর্বৃত্তের একজন তাকে লক্ষ্য করে চেয়ারও ছুঁড়ে মারে। অধ্যক্ষের চিৎকারে অন্যান্য শিক্ষকরা জড়ো হওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। মুখে ও শরীরে ময়লা নিক্ষেপ করায় অধ্যক্ষের শার্ট-প্যান্ট ভিজে যায় এবং ডান চোখের পাশে আঘাত পান। এসময় কলেজটির দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন খানও বসা ছিলেন। তিনিও ময়লা আক্রান্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে স্থানীয় সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে বসেন। তিনি বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোন সমাধান হয় নি। আজকের এই ঘটনাটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অন্যায় করেছেন কি করেননি, তা নির্ধারণ করবে মন্ত্রণালয়। এভাবে দুর্বৃত্তরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শিব্বির আহমেদ জানান, কে বা কারা এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে তা আমাদের জানা নাই। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। পাঁচ মাস পর অধ্যক্ষ কলেজে আসবেন বিষয়টি আমাদের আগে জানানো হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেই গত পাঁচ মাস ঢাকায় বসে কলেজের আর্থিক ও নীতিনির্ধারণী কাজগুলো সম্পন্ন করেছি। আমার অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক ও অন্যান্য কাজ করছেন উপাধ্যক্ষ। আজকের এই হামলা করা হয়েছে আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য। যেন আমি আর কলেজে না আসি।
উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, স্নাতক ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মিলিয়ে কলেজটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। ১৯টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে কলেজটিতে। মোট শিক্ষক সংখ্যা ১১১ জন। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও বেসরকারী শ্রেণি মিলিয়ে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৬৭ জন। এত বড় একটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় সবক্ষেত্রেই অচলাবস্থা চলছিল।