এম.শরীফ হোসেন, দুবাই থেকে | নরসিংদী প্রতিদিন-সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০১৯:
দীর্ঘ ৬ বছরের অধিক সময় ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমবাজার উন্মুক্ত না থাকায় বাঙ্গালী প্রবাসীদের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
এতে আমিরাতে বসবাসকারী শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
২০১৮ এর শেষার্ধে আমিরাত সরকার দেশটিতে বসবাসকারী অবৈধ শ্রমিকে জিরো টলারেন্স নীতিতে কয়েক মাসের জন্য সকল দেশের শ্রমীকের ভিসা ট্রান্সফার ও বৈধ হওয়ার সূযোগ করে দিয়েছিল। এতে বাংলাদেশী শ্রমিকরাও ভিসা ট্রান্সফার করে কোম্পানী পরিবর্তণ এবং অবৈধরা বৈধ হবার সুবিধা লাভ করে।কিন্তু তা বেশী দিন স্থায়ী হয়নি। এ প্রসেসিং সিস্টেমে শ্রমিকরা যখন অভিজ্ঞতা ও কর্ম দক্ষতা দেখিয়ে অধিক বেতন নিয়ে চলতি কোম্পানী হতে নতুন কোম্পানীতে চলে যেতে থাকে তখন অভিজ্ঞ শ্রমিকের ভাটা পড়ায় এখানকার বিখ্যাত রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানীগুলো একজোট হয়ে দুবাই সরকারকে ভিসা ট্রান্সফারের এ সিস্টেম বন্ধ করার দাবী জানায়। আবেদনের প্রেক্ষিতে দুবাই সরকার উন্মুক্ত ভিসা ট্রান্সফার সিস্টেম বন্ধ করে দিলেও দুবাই ফ্রি জোন এর অধীনে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি কোম্পানীকে এর অনুমতি প্রদান করেন।
যেখানে কোম্পানী পরিবর্তণ করতে আগ্রহী শ্রমিকের তুলনায় পদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এতে করে বাংলাদেশী শ্রমিকদের যে সম্ভাবনাময় ও আশার উন্মুক্ত পথ ছিল তাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ সীমিত সূযোগ বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভাগ্য বড় কোন পরিবর্তণ আনতে পারেনি।
নরসিংদী প্রতিদিনকে শ্রমিকরা জানায়, গত ৮/১০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে তারা এখানে কোম্পানীতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। দিন দিন কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কাজের চাপ বহুগুনে বেড়ে গেছে। কিন্তুু বেতন আর বাড়ছেনা। ভিসা উন্মুক্ত না থাকার বিষয়টি সকল কোম্পানীর পরিচালক ও ইনচার্জগণ অবগত থাকায় তারা বিশ্বাস করে যে,কাজের চাপ বাড়ালেও বাঙ্গালী শ্রমিকরা দেশে যেতে বাধ্য না।কারন,চলে গেলে আবার পূনরায় দুবাই আসার পথ নেই।এ ভাবনা হতে দিন যত যাচ্ছে বাঙ্গালী শ্রমিকদের কাজের চাপ ততই বৃদ্ধি করছে।
এদিকে,অতিরিক্ত কাজের চাপ,স্বল্প বেতন, আর পরিবারহীন জীবন সব মিলিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের।
সদ্য কোম্পানী ছেড়ে যাওয়া মাহাবুব নামের একজন প্লাম্বার টেকনিশিয়ান ও বারিক নামের একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান,প্রচুর পরিমান কাজের চাপ বেড়েছে অথচ বেতন বাড়েনি। সারাদিন রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে কঠোর পরিশ্রম শেষে মাসে যা বেতন পাই তা হতে খাওয়া দাওয়া ও খরচ পাতি রাখলে বাড়িতে পাঠানোর মত পর্যাপ্ত টাকা বাঁচেনা। ফলে অধিক পরিশ্রমে স্বল্প বেতনে কাজ করে নিজের চলা ও পরিবার চালানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।সে হিসেবে দেশেই ছোট খাট কিছু করার চিন্তা করে একবারে চলে যাচ্ছি।
অপরদিকে , বাংলাদেশী উন্মুক্ত শ্রমবাজার বন্ধ থাকার সুবিধা লুটছে পার্শবর্তী দেশ ভারত, পাকিস্থান ও নেপাল।জানা যায়,তাদের ভিসা ট্রান্সফার বা নতুন ভিসায় উন্মুক্ত শ্রমবাজারে কোন বাধা নেই। আর এ সুবিধায় তারা প্রথমাবস্থায় অধিক বেতন নিয়ে যেমন করে কোম্পানীতে আসছে তেমনিভাবে ১/২ বছর পর অভিজ্ঞতা ও কর্ম দক্ষতা দেখিয়ে অন্য কোম্পানীতে তারও অধিক বেতন নিয়ে নিয়োগ পাচ্ছে। ফলে, পরোক্ষ ভাবে বেতন বৈষম্যর একটি বিষয় ও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
পুরনো, অভিজ্ঞ এবং অধিক শ্রম দিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেতন সেই আগের অবস্থায় রয়েছে।কিন্তু অন্যান্য দেশ হতে আগত নতুন ও অনভিজ্ঞ শ্রমিকরা অধিক বেতন নিয়ে কোম্পানিতে নিয়োগ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার হতে বেশ কয়েকবার আমিরাতের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবার আশ্বাস থাকলেও ফলাফল কিছুই নেই।
শ্রমিকদের দাবী, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সরকার সফল কুটনৈতিক তৎপরতার মধ্যদিয়ে আমিরাতের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে যেন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এতে করে একদিকে যেমন আমিরাত প্রবাসীরা অবহেলা ও বেতন বৈষম্য হতে রক্ষা পাবে। অপরদিকে সরকারও অধিক রেমিটেন্স এর সুবিধা পাবে।