মো. সাব্বির হোসেন | নরসিংদী প্রতিদিন-
সোমবার,৩ জুন ২০১৯: দুদকের করা ভুল মামলায় আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির পরিবর্তে আসামি হয়ে দীর্ঘ ৩ বছর কারাভোগ করেন নরসিংদীর পলাশ শিল্পাঞ্চল এলাকার ঘোড়াশাল বাংলাদেশ জুটমিলের শ্রমিক জাহালম। জেল থেকে ফিরে মাত্র ৩০০ টাকা মজুরি পেয়ে অভাবের সংসারে মেয়ে চাদনীর আবদার রাখতে ঈদে নতুন জামা কিনে দিতে রাতের বেলায় রিকসা চালায় জাহালম।
গতকাল রবিবার রাত যখন সাড়ে ৯টা ঠিক তখনি রিকসায় চালকের আসনে জাহালম এর দেখা হলে নরসিংদী প্রতিদিনকে জানায়, মিত্যা মামলায় ৩ বছর জেলে থাকায় বাংলাদেশ জুটমিলের শ্রমিক হিসেবে পাইনি ঈদ বোনাস। আমার একমাত্র ছোট্ট মেয়ে চাঁদনী বায়না করেছে ঈদে তাকে নতুন জামা কিনে দিতে হবে। তারপর আবার পরিবার মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। সবার মতো আমারও তো ঈদ করতে মন চায়। কিন্তু জুটমিল থেকে পাওয়া এই অল্প মজুরি দিয়ে কিভাবে ঈদের বাড়িতে যাবো? তাই রিকসা চালিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি ঈদের খরচ তুলতে। এমন সময়ে তার রিকসায় একজন যাত্রী উঠে বসলে তাকে নিয়ে ছুটে চলে জাহালম।
দুদকের করা ভুল মামলায় আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির পরিবর্তে আসামি হয়ে দীর্ঘ ৩ বছর কারাভোগ করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ জুটমিলের চাকরি ফিরে পেতে আবেদন জানান। তার আবেদন মঞ্জুর হলে ফিরে পায় বাংলাদেশ জুটমিলের চাকরি। এদিকে মিলটির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরি ১২ সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকায় চরম বিপদের মুখে পড়ে তারা। দাবি আদায়ে পাটকল শ্রমিক সংগঠন রমজানের মধ্যেই মিলটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ৯৬ ঘন্টা উৎপাদন বন্ধ থাকার পর মিলটি আবার চালু হয়।
বাংলাদেশ জুটমিলের শ্রমিক সংগঠনের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, ঈদের আগেই তাদের মজুরি পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বাস দেন মিল কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার ১২ সপ্তাহের মধ্যে ৭ সপ্তাহের বেতন ও বোনাস পান শ্রমিক ও কর্মচারীরা। কিন্তু সেই জাহালম মজুরি পায় ৩০০ টাকা। ৩ বছর দুদকের করা মামলায় ভুল আসামি হয়ে জেল থাকার কারণে এবং বকেয়া সপ্তাহ গুলোতে তার কাজ না থাকায় সে পায়নি বোনাস। আর দুদিন পরেই ঈদ। নিজের ছোট্র মেয়ে চাঁদনীর নতুন জামা কিনার টাকা তার কাছে নেই। ঈদ করতে টাঙ্গাইল জেলার নিজ বাড়িতে ছুটিতে যাওয়ার কথা জাহালমের। প্রিয়জনদের নিয়ে আর আট দশটা পরিবারের মতো এবারের ঈদ উদযাপন করার মতো টাকা তার কাছে নেই। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে। তাই বাধ্য হয়ে ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় রাতের বেলায় রিকসা চালিয়ে যাচ্ছে। যেন দিনের আলোতে সবার নজরে না আসে।
তাকে নিয়ে কথা পলাশ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আশাদউল্লাহ মনা’র সাথে। তিনি নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন, ঘোড়াশাল পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম নবাব, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামানসহ আমি তাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছি এতে যদি তার পরিবারের কিছুটা ঈদের আনন্দ ফিরে আসে।