নিজস্ব প্রতিবেদক। নরসিংদী প্রতিদিন-
শনিবার ৮ জুন ২০১৯:
নরসিংদী জেলার দুর্গম একটি উপজেলার নাম রায়পুরা। এই উপজেলার একটি পাহাড়ী এলাকার নাম মরজাল। এই টিলে টালা আর কিছু জলাশয় ও ঝোপঝাড় নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ওয়ান্ডার পার্ক নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। নামে এটি বিনোদন কেন্দ্র হলেও এর অন্তরালে চলে সকল অনৈতিক কর্মকান্ড। যারফলে বলা যায় অনৈতিক কার্যক্রমের এক আড্ডাখানা মরজালের “ওয়ান্ডার র্পাক”। এই ওয়ান্ডার পার্কটি ঘুরে এসে অনেকেই পার্ক সম্পর্কে নানা মন্তব্য প্রকাশ করেন।
তারই প্রেক্ষিতে শনিবার ওয়ান্ডার পার্কটি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঈদের আমেজ কাটানোর জন্য ছুটে আসেন এখানে। একটু ভেতরে যেতেই চোখে পড়লো কিছু উঠতি বয়সের যুবক-যুবতিরা জুটিবদ্ধ হয়ে ঝোপঝাড়ে বসে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। আর অন্যদিকে ভদ্র পরিবারের লোকজন হাটাহাটির সময় বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করতে শোনা গেছে। এছাড়া ভৈরবের কালীকাপ্রসাদ থেকে ঘুরতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভদ্র মহিলা হাতে ক্যামেরা দেখে সাংবাদিক নিশ্চিত হয়ে বলেন, আমি ঈদের আমেজ কাটাতে এখানে এসেছি। আমি পার্কের এক পাশে বসে গল্প করার সময় পাশের কাটাতার পেরিয়ে দু’জন ছিনতাইকারী ছুটে এসে গলার চেইনটি নিয়ে দ্রুত ছুটে গেলো। কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা কিছুই করার নেই বলে জানিয়ে দেয়। এছাড়া কয়েকদিন আগে এখানে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থীর মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল যা কিনা অহরহ হয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই।
এছাড়া সাধারন পরিবারের দু-চার জন্য অভিযোগ করে বলেন, এই পার্কের প্রবেশ ফি এক বছর যাবৎ ৫০ টাকা ছিল। কারন এই পার্কে মাত্র তিনটি রাইড ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে তারা একই রাইড থাকায় ১০০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করে। যার ফলে সাধারন লোকজন প্রবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
পার্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীদের কয়েক জনের সাথে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশীরা জানান, এখানে সন্ধার পর মাইক্রোবাস, সিএনজি ও প্রাইভেটকার যোগে কিছু লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে আমোদ ফুর্তি করে থাকে। ধারনা করা হচ্ছে এই পার্কের ভেতরে একাধিক ছোট ছোট ঘর রয়েছে তাতে অসামাজিক কার্যক্রম চলে। এই কার্যক্রমের সাথে স্থানীয় ও আশপাশের একাধিক প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। এই পার্কের ভেতরে মাদক সেবন ও বাণিজ্যের একটি নিরাপদ আড্ডাখানাও বলা চলে। কেননা এই এলাকা দিনের বেলায়ই লোকজনের পদচারনা খুবই কম। আর রাতের বেলাতো ভয়ের একটি স্থান কল্পনাও করা যায়। এছাড়া এই পার্ক থেকে রাতের অন্ধকারে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রতিবেশীরা আরো জানান, কর্তৃপক্ষ যদি কোনক্রমে আমাদের নাম ঠিকানা জানতে পারেন, তাহলে আমাদের এলাকা ছাড়া করে ছাড়বে। তাই যত অন্যায়ই হোক না কেনো এলাকার কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ বা মন্তব্য কিছুই করা থেকে বিরত থাকে।
পার্কের এমন শত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের ব্যবস্থাপক সৈয়দ ইমরান হোসেন সজিব এই সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এই প্রতিবেদককে জানালেন, আমরা এই পার্ক তৈরী করেছি সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আনন্দ উপভোগ করার জন্য। তবে পার্কের সমস্ত এলাকা ওয়াল না করতে পারলেও বেশীর ভাগই ওয়াল করা হয়েছে বাকি কিছু অংশ কাটা তাঁর দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে শুধু মাত্র নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে। আর এখানে যেহেতু ইকো রিসোর্ট করা হয়েছে তাতে কেউ আসলে তাদের ভাড়ার মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে মাদকের বিষয়টি আর অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এখন সাধারন মানুষের একটাই দাবী যেখানে সাধারন লোকজন আনন্দ উৎসব করতে যাবে সেখানে গিয়ে যদি অসামাজিক কার্যকলাপ দেখতে হয় আর ছিনতাইকারীদের হাতে নাজেহাল হয়ে নিরানন্দ হয়ে ফিরে আসতে হয় তাহলেতো এটা ক্ষতি ছাড়া কিছুুই নয়। তাই এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে দাবী করেন এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা।
#