খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন-
বুধবার,৩১ জুলাই ২০১৯:
নরসিংদীর মাধবদীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সুরাইয়া (৭) নামে এক শিশু। প্রতিবেশীদের ছাদে সমবয়সী শিশুদের সাথে খেলা করতে গিয়ে কবুতরের খোয়ারে দেয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে সে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মাধবদী পৌর এলাকার বিরামপুরস্থ নুরালাপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামে। আহত সুরাইয়া বর্তমানে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় তার বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল সহ কনুই থেকে ডান হাতকাটা পড়েছে। আহত সুরাইয়া ওই এলাকার হতদরিদ্র শাহিন মিয়ার কন্যা।
এ ঘটনায় ভবন মালিক জয়নাল আবেদিনকে বিবাদী করে বুধবার (৩১ জুলাই) মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে সুরাইয়ার বাবা শাহিন। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ভবন মালিকের গাফিলতিতে আমার মেয়েটার দেহ আজ বিকৃত হয়ে গেছে। তার ভবিষ্যৎ কি হবে, এ দায় কার পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের না ভবন মালিকের? তিনি এর সঠিক বিচার চান আইন প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে। শাহিন জানান, গত ২০ জুন মাধবদী পৌর শহরের বিরামপুরস্থ দড়িপাড়া (পাকার মাতা) মহল্লার মৃত: আহাদ আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীনের ভবনের ছাদে এ ঘটনা ঘটে। পরে সুরাইয়াকে মুমুর্ষ অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করেন। সুরাইয়া আজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ২২২ নং ওয়ার্ডের ৭ নং বেডে মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সহায় সম্বল বিক্রি করে সুরাইয়াকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার উপরে খরচ হয়ে গেছে। তবে ভবন মালিক জয়নাল আবেদিন এ দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করে শাহিন।
স্বজনরা জানান, ঘটনারদিন থেকে আজ পর্যন্ত বাড়ির মালিক জয়নাল বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বরং তা ধামা চাপা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ভবন মালিক জয়নাল ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই আজ মৃত্যুর মুখে সুরাইয়া। তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
তবে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো: মিজানুর রহমান বলেছেন, সুরাইয়ার বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের বিষয়টি তিনি অবগত নন, আজই শুনেছেন। তিনি আরো বলেন কোন ভবন নির্মাণের পূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি বা তার থাকলে তা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নিজ খরচে ঝুঁকি মুক্ত করা ভবন মালিকের দায়িত্ব। সুতরাং এ দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ভবন মালিক জয়নাল।
এদিকে, এ বিষয়ে সুরাইয়ার বাবা শাহিনের অভিযোগের ভিত্তিতে উপ-পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাককে তদন্ত করার জন্য ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান।
রাজ্জাক জানান, বিবাদী জয়নালের ভবনের ছাদে কোন নিরাপত্তা নাই, পাশে হাই ভোল্টেজের বিদ্যুতের কভারবিহীন তার। তবে পুলিশ দেখে পালিয়ে গেছে জয়নাল। তার স্ত্রী হনুফা বেগম জানান, তাদের ছেলে রাশেদ, প্রতিবেশী সুরাইয়া ও রিদা মনি সহ শিশুরা ছাদে খেলা করতে উঠে ঘটনার দিন। সুরাইয়া কবুতরের খোয়ারের পাশে থাকা পল্লী বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজের তারে জড়িয়ে ধরে দোতলা ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায় জয়নাল ও শাহিন সহ তার স্বজনরা।