খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন –
শনিবার,১১ই জানুয়ারী ২০২০: পবিত্র কুরআন শরিফের বাংলা অনুবাদক যিনি উপমহাদেশে বিখ্যাত ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন। নরসিংদীতে তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে বেদখলে ও একমাত্র বাড়িটি পুনঃসংস্কার হলেও পরিচর্যার অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইতিহাস ঐতিহ্যের চিহ্ন আখড়ে ধরে রাখতে সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনারের দেয়া ১ কোটি ২০ লাখ টাকার অনুদানে প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয় ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িটি। যা দূরদুরান্ত থেকে দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা।
শুক্রবার ছুটিরদিন উপলক্ষে আবু কালাম মন্ডল নামে এক চাকরীজীবি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে সপরিবারে দেখতে আসেন এই বাড়িটি তিনি জানান, দুইবার এসেছি এই জাদুঘরটি বন্ধ অবস্থায় থাকে। তিনি আরো জানান,এখানে পাঠাগার আছে পাঠক নেই,বাড়ি আছে পরিচর্যা নাই। পুরনো বাড়িটি যেন নাম সর্বস্ব সংস্কার, বিলবোর্ড ফেস্টুন গুলো নষ্ট হয়ে গেছে, এ কেমন জাদুঘর এখানে এসে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের ইতিহাস ঐতিহ্যের চিহ্ন আখড়ে ধরে রাখতে দৃষ্টি নন্দন করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের প্রতি দাবি জানান দর্শনার্থীরা।
নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন মেহেরপাড়া ইউনিয়নে পাঁচদোনার বাজার সংলগ্ন বাড়িটিতে ১৮৩৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন। হিন্দু পরিবারে জন্ম হলেও তার সুনাম-সুখ্যাতির কেন্দ্র-বিন্দু ছিল আরবি-ফার্সি ভাষার পান্ডিত্য। ১৮৭১ সালে গিরিশ চন্দ্র সেন সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে ৪২ বছর বয়সে তিনি মৌলভী এহসান আলীর কাছে আরবি ব্যাকরণ শিখেন। তিন বছর কঠোর সাধনার পর ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলায় গিরিশ চন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র কুরআন শরিফের প্রথম পারার বাংলা অনুবাদ করেন, যা শেরপুর চারু চন্দ্র প্রেস থেকে ছাপা হয়। পরবর্তী সময়ে তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করে ১৮৮৪ সালে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীকে চমৎকৃত করেন। তার প্রকাশিত ৩৫টি গ্রন্থের মধ্যে ২২টি ইসলাম ধর্মবিষয়ক। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় মারা যান।
ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের শেষ চিহ্ন টুকু ২০০৮ সালে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাড়িটি দেখতে আসেন পাঁচদোনা গ্রামে। অস্তিত্ত বিলিনের পথে এই বাড়িটি দেখে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে ২০১৫ বছরের ২৪ মে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও দিকনির্দেশনায় ঐতিহ্য অন্বেষণ কাজ করবে। সেই সাথে মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাড়িটি মেরামত ও সংরক্ষণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতীয় হাইকমিশন ঐতিহ্য অন্বেষণকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন। পরবর্তিতে ২০১৬ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি এই বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ ও জাদুঘরের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।