নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী প্রতিদিন –
শুক্রবার, ৩১ই জানুয়ারী ২০২০:
সিটি নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফুটপাতের ওপর নির্বাচনী ক্যাম্প অপসারণের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত এবং সড়কের পাশে এখনও এসব ক্যাম্প রয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব ক্যাম্প অপসারণের নির্দেশ দিলেও এখনো সরানো হয়নি এসব ক্যাম্প।
ইসির ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফুটপাতের ওপর মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের স্থাপিত নির্বাচনী ক্যাম্প অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। এ অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুটপাতের ওপর স্থাপিত সব নির্বাচনী ক্যাম্প অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ ফুটপাতের ওপর নির্বাচনী ক্যাম্পের বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ হয়েছিল।
কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি এমন নির্দেশনার পরও শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন এলাকায় এমন ক্যাম্প দেখা গেছে। অন্যান্য সব এলাকার মধ্যে বাড্ডা এলাকাতেও একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে এমন নির্বাচনী ক্যাম্প অনেক স্থানেই দেখা গেছে। বাড্ডার গুদারাঘাট সংলগ্ন কাঁচা বাজারের পাশে এমন তিন-চারটি নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা যায়, ক্যাম্পের ভেতরে ব্যানার-ফেস্টুনে ভরা, সাজিয়ে রাখা আছে টেবিল চেয়ার।
এ বিষয়ে ওই ক্যাম্পের কর্মী সাইফুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব ক্যাম্প অপসারণের ইসির নির্দেশের পর আমরা তেমনভাবে এসব ক্যাম্প ব্যবহার করছিনা। তবে এখনও অপসারণ করা হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেকোরেটরের লোক এসে এসব প্যান্ডেল, চেয়ার, টেবিল নিয়ে যাবে। আমারা শুধু মাঝে মাঝে বসি। তবে নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছিনা।
এদিকে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১২টায় ঢাকার দুই সিটি (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত ঢাকার দুই মেয়র নির্বাচনের এ আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে বহু আগে থেকেই চলে আসছিল নির্বাচনী আমেজ। ব্যানার-পোস্টারে অনানুষ্ঠানকিভাবে বেশ আগে থেকেই চলছিল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর লেমিনেটেড পোস্টারে সয়লাভ হয়ে যায় পুরো ঢাকা।
এ নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর ১২ দিনের মধ্যেই ২ হাজার ৪৭২ টন লেমিনেটেড প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। পুরো নির্বাচনে পোস্টার থেকে বর্জ্য জমবে ২ হাজার ৫০০ টন। এছাড়া নির্বাচনী পোস্টারসহ সব মিলে গত বছরজুড়ে ঢাকা শহরে ১০ হাজার টন লেমিনেটেড পোস্টারের বর্জ্য তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)।
নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে ঢাকা শহর পুরো ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এছাড়াও এ বছর পোস্টারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষ বলছেন, সবুজ ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া প্রার্থীরা প্রচারণাতেই ব্যাপকহারে পরিবেশ ও শব্দ দূষণ করছেন।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারণা উপলক্ষে প্রার্থীগদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেইট, তোরণ প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জ্বা ইত্যাদি প্রচারসামগ্রী ও নির্বাচনী ক্যাম্প নির্বাচন শেষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরিয়ে নিতে বলা হবে। এরপর যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে নামবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ৩১৮। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়াও অস্থায়ী ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৫৪টি।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। এ ছাড়া অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা রয়েছে ৮৭৬টি।