নিউজ ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-বৃহস্পতিবার-১৮ জুন ২০২০: নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড.জাফর আহমেদ খান। এর আগে গতকাল এ সংক্রান্ত গেটে প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়,‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ১৩ জুন মৃত্যুবরণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদের ৬২ সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি উক্ত তারিখে শূন্য হয়েছে।’
সংবিধান অনুযায়ী,জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ফলে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শূন্য ঘোষিত আসনটিতে উপনির্বাচনের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
গত ১ জুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তির পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসে মোহাম্মদ নাসিমের। ৪ জুন তার ব্রেইন স্ট্রোক হলে পরদিনই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। এর টানা ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ১৩ জুন সকালে তিনি মারা যান।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় ৪ নেতার একজন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম পঞ্চমবারের মতো সংসদে সিরাজগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপঝেলার বাবা এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মৎ আমেনা মনসুরের ঘরে নাসিমের জন্ম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মনসুর আলী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।
মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ষাটের দশকে এদেশের ছাত্র আন্দোলনে প্রথম সারির কর্মী নাসিম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কারাগারে পিতা মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মোহাম্মদ নাসিম। তখনও তিনি কারাবরণ করেন।
১৯৮৬ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম। তখন সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। এরপর ১৯৯১ সালে সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান নাসিম। পরের বছরের মার্চেই তাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত নাসিম একসঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদল করে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেয়া মামলার কারণে মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার বড় ছেলে তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন পান। ফলে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর নাসিমকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় তার নাম আসেনি। তবে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।