প্রযুক্তি ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
রবিবার-২১ জুন ২০২০: বহু বছর ধরেই মানুষ পৃথিবীর বাহিরে প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানীরাই দাবি করে আসছেন পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। তবে এই দাবি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন- বর্হিজাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের কথা বর্তমানে কেবল কাল্পনিক, কারণ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে এই পর্যন্ত কোন জীবাণু অথবা অতি হ্মুদ্র জীবাণু আছে বলে, পরিষ্কার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যদিও আমাদের ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে আছে- পৃথিবীর বাহিরেও আরও অনেক প্রাণ আছে।পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তিনিই, যিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য আকাশ আর অনুরূপ সংখ্যক পৃথিবী। তাদের উপরও আল্লাহর নির্দেশ অবতীর্ণ হয়; (এ তথ্যটি) এ জন্য যাতে তোমরা অবগত হও, আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বাজ্ঞ।’ [তালাক : ১২]
তবে এবার বিজ্ঞানীদের একদল জানাচ্ছে, আমাদের নিজস্ব ছায়াপথেই রয়েছে কমপক্ষে ৩৬টি বুদ্ধিমান সভ্যতা। ঠিক মানবসভ্যতার মত। পৃথিবীর মত এমন ৩৬টি জায়গা রয়েছে যেখানে বুদ্ধিমানদের বসবাস। কিন্তু তারা কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে উঠতে পারছেন না। কারণ দূরত্ব। কম করে ১৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে দূরে অবস্থান করছে তারা। ফলে তাদের পক্ষে কারও সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করাই সম্ভব হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের সৌরজগতের বাড়ি যে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথে, সেখানে ১০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে এবং নক্ষত্র প্রতি একটি করে এক্সোপ্ল্যানেট বা পৃথিবীসদৃশ গ্রহ থাকতে পারে। আমাদের সৌরজগতের সব গ্রহ সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা এ রকম গ্রহগুলোকে এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়।
এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা নিবন্ধ দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছে। নতুন গবেষণা নিবন্ধে মিল্কিওয়েতে কমিউনিকেটিং এক্সট্রা-টেরিস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (সিইটিআই) সভ্যতার সংখ্যার কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও অন্য কোনোখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব কি না—দীর্ঘদিনের এসব প্রশ্নের একটা দিশা মিলল এই গবেষণায়। তাঁরা অনুমান করছেন, অন্যান্য গ্রহে যেমন বুদ্ধিমান জীবনের উদ্ভব হয়েছিল, ঠিক তেমনই আমাদের গ্রহেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। পৃথিবীতে যেমন বুদ্ধিমান জীবন গঠনে প্রায় পাঁচ শ কোটি বছর সময় লেগেছিল, অন্যান্য গ্রহেও তেমনই সময় লেগেছিল। এ ছাড়া হিসাব করে দেখা গেছে, আমাদের পৃথিবীর মতোই একটি প্রযুক্তিগত সভ্যতা কমপক্ষে ১০০ বছর স্থায়ী হয়। সর্বোপরি পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত সভ্যতার উত্থানের আগে বিবর্তনের জন্য ৪৫০ কোটি বছর লেগেছিল এবং এরপর যোগাযোগ করতে সক্ষমতা দেখা দিয়েছিল। অন্যান্য সভ্যতার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটতে পারে। উন্নত সভ্যতার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে যোগাযোগ সক্ষমতাকে ধরে নেওয়া হয়।
সহযোগী গবেষক ব্রিটেনের নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কনসেলিস বলেছেন, ‘মহাবিশ্বে মানুষ ছাড়া বুদ্ধিমান প্রাণীর উন্নত সভ্যতা আর কতটি রয়েছে, তার একটা আন্দাজ এই প্রথম পাওয়া গেল।’
১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিলেন বিখ্যাত সমীকরণ ‘ড্রেক ইকুয়েশন’। এই সমীকরণের সমাধানের জন্য সাতটি মাত্রা বেছে নিয়েছিলেন ড্রেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কোনো গ্যালাক্সি বা ছায়াপথে বছরে গড়ে কতগুলো নতুন নক্ষত্র জন্মাচ্ছে, একটি সভ্যতার অন্য বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সংকেত তৈরির দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় সময় কিংবা কোনো সময়সীমার মধ্যে ভিনগ্রহীদের পাঠানো সংকেত আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে পারে। ড্রেক কথিত এই সাতটি বিষয়ের মধ্যে খুব কম বিষয়ই রয়েছে, যেগুলো গণনাযোগ্য।
গবেষকেরা নির্দিষ্ট ছায়াপথে যোগাযোগে সক্ষম বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতার সন্ধান পাওয়ার জন্য যে গণনাপদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, তা ‘অ্যাস্ট্রোবায়োলজিক্যাল কোপারনিকান লিমিট’ নামে পরিচিত। নিবন্ধের লেখক ও নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের সহকারী অধ্যাপক টম ওয়েস্টবি বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান সভ্যতার সংখ্যা নির্ধারণের সর্বোত্তম পদ্ধতিটি জীবন–সম্পর্কিত মূল্যবোধের অনুমানের ওপর নির্ভর করে। তবে এই জাতীয় মতামত নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।’
এ ধরনের গবেষণায় যোগাযোগে সক্ষম সভ্যতার সংখ্যা এযাবৎকালে অনেক বেশি এসেছে। কিন্তু এ গবেষণায় এ সংখ্যা মাত্র ৩৬টি বলা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, অনেকগুলো বিষয়েই গবেষকেরা রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছেন। যেমন, উন্নত প্রযুক্তির সভ্যতা মাত্র ১০০ বছর টিকবে বলে যে অনুসিদ্ধান্ত টানা হয়েছে, তা অতি সাধারণীকরণ বলা যায়।
গবেষকেরা মনে করেন, একেকটি সভ্যতার মধ্যে গড় দূরত্ব প্রায় ১৭ হাজার আলোক বছর। তাই তাদের শনাক্তকরণ এবং যোগাযোগ বর্তমানে অসম্ভব।