কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলায় সাবরং ট্যুরিজম পার্কে ১০ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করবে বেসরকারি কোম্পানি সানসেট বে লিমিটেড। জানা গেছে, হোটেলটি নির্মাণে ১৯ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সানসেট বে লিমিটেড। এতে সুইমিংপুলসহ আবাসিক হোটেলের সবধরনের সুবিধা থাকবে এবং ৩৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সমূদ্র সৈকত তীর হবে পর্যটকদের নগরী। ওই অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ভাড়বে কর্মস্থান। এদিকে রাজধানীর ঢাকায় বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও সানসেট বে লিমিটেডের মধ্যে জমির লিজ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত ওই অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের কর্মসংস্থার বৃদ্ধি ও সমূদ্র সৈকত তীর ঘেষে শাহপরীর দ্বীপে সংলগ্ন প্রায় আয়তন এক হাজার ৪৭ একর জমীতে নির্মাণ হবে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি। পার্কটি ঢাকা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহর থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে।
সরজমিনের ঘুরে দেখা গেছে, অপরুপ সৌনর্য্য আর সমুদ্রে গর্জন ও পর্যটকদের মুনমুগ্ধ করে তুলতে শাহপরীর দ্বীপ বাসীর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) কর্তৃক প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষার বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বাঁধটি নির্মাণ হলে ঘুরে দাড়াবে সুবিধাবঞ্চিত শাহপরী দ্বীপের বাসিন্দারা।
এসময় সমুদ্র সৈকত তীরে কথা হয় স্থানীয় জেলেদের সাথে, তারা জনান বাড়ি থেকে শেষ বিদাই নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে মাছ ধরতে পাড়ি দিতে হয়। আর মাছ ধরার নৌকাতে সর্বনিম্ন দশজন জেলে অংশ নেন। এ দ্বীপ থেকে একশ বিশ কিলোমিটার সমুদ্রের মাঝখানে মাছ শিকার করে মাছ মাহাজনদের কাছে বিক্রি করেন জেলেরা। এতে বিগত সময়ে ঝড়ের কবলে পড়ে অনেক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের মূখে আহার তুলে দিতে তারা মাছ শিকার করেন। এক সপ্তাহে একজন মাছ ধরার শ্রমিক মাহাজনের চাহিদা মিটিয়ে দিয়ে দুই থেকে তিন হাজার মজুরি নিতে পাড়েন।
কথা হয় শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ী জাকারিয়া আরাফাতের সাথে তিনি জানান,শৈশব থেকে ঝড়,তুফান,সিডর,আইলা সহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে এই শাহপরীরদ্বীপে পররিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। আর পূর্বপুরুষের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে সমুদ্রীক মাছ ও সমঞ্জামাদীর ব্যবসা করে আসছি। তিনি আরও জানান শাহপরীর দ্বীপের সুবিধা বঞ্চিত পরিবার গুলোর পাশে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ জনপ্রতিনিধি ও অনেক দাতা সংস্থা পাশে দাড়ান। তবে বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে আছে এ দ্বীপের মানুষ। তিনি আরও জানান, শাহপরীর দ্বীপের নারীদের চলাফেরা শরিয়ত মোতাবেক খুবই পর্দাশীল। এ দ্বীপের পুরুষরা দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের সদস্যদের মূখে আহার তুলে দেন। জেলেদের উপর আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে। জেলারা জীবনের ঝঁকি নিয়ে মাছ শিকার করে এতে ব্যবসায়ী মাহাজনরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে থাকে। দেখা গেছে সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য একটি নৌকা তৈরী করতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা খরচ হয়, তা সমুদ্রে তলিয়ে গেলে সব শেষ,আর এ ক্ষতি মাছ শিকারের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে হয়।
কথা হয় লবণ চাষীদের সাথে তারা জানান, আকাঁবাঁকা আর এবড়ে থেবড়ে পথের দুধারে সমুদ্রের নোনা জলে লবণক্ষেত। এখন শীতকাল লবণ উৎপাদনের জন্য উপযোগি সময়। প্রতি ভিঘা জমি থেকে এক সৃজনে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। বর্যা কালে জমি গুলো তলিয়ে গেলে বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতে হয় তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে হয়। শাহপরীর দ্বীপবাসীর স্বপ্নের বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে ঘুরে দাড়াবে দ্বীপবাসী।
📝 খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন-