নরসিংদীর মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় সাতশ বছর ধরে মাঘী পূর্ণিমা তিথীতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা। এবার করোনার এ সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই ছাড়াই শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এ মেলা। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়।
সরজমিন দেখা যায়, মেলার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা পৈত্রিক সূত্রে আয়োজন করে আসছেন তিনি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলা প্রাঙ্গণে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ঢল নামে। তবে শারীরিক দূরত্ব কিংবা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি হয়ে কেনাকাটা করতে মেলায় পসরা সাজানো দোকান গুলোতে নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে দেশ থেকে করোনাভাইরাস বিদায় নিয়েছে।
নরসিংদী শহরের পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন এ মেলা যেন শিক্ষার্থীদের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলায় কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ, লৌহ ও ইলেকট্রনিকসহ নানা জাতের শিল্প সামগ্রী, মিষ্টি-জিলাপি ও মিঠাই মণ্ডাসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলনার দোকান। এতে মহিলা-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় জমায়। এছাড়াও চকরি, ময়ূর নৌকা, সাপখেলা, আর নাগর দোলায় হই-হল্লোর বিনোদনে মেতে উঠে তরুণ-তরুণীরা। স্বাস্থ্যবিধি ঝুঁকিকে তোয়াক্কা না করে অনেক দম্পতি শিশুদের নিয়ে এ মেলায় কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
বাউল আখড়াধাম কতৃপক্ষ জানান, সাতশ বছর পূর্বে এ আখড়ায় এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তার স্মরণে প্রতিবছর এ আখড়া ধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। প্রতি বছরই এ মেলায় দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান বাউল শিল্পীরা অংশ নেন। এছাড়া দেবতা ব্রহ্মার মহাযজ্ঞানুষ্ঠানে বাউলদের পাশাপাশি পূর্ণার্থীরাও অংশ নেন। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কলা পাতায় মহাপ্রসাদ গ্রহণসহ মিলন মেলার মাধ্যমে এর ইতি ঘটে।
📝 খন্দকার শাহিন | নরসিংদী প্রতিদিন-