আমরা সকলেই নিশ্চয় স্বীকার করব যে, মানুষ তার বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখা উচিত কাকে বন্ধু বানানো হচ্ছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।”
সূরা মুদ্দাসসিরের ৪২ ও ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “বেহেশতবাসীরা দোজখবাসীদের জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা কেন দোজখের অধিবাসী হলে? জবাবে দোজখবাসীরা কয়েকটি কারণ বলবে। তারমধ্যে একটি হিসেবে তারা বলবে, আমরা এমন লোকদের সাথে চলাফেরা করতাম যারা ছিল অসৎ।”
অন্যদিকে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে। তিনি আরও বলেছেন, মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।’
নবীজি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসল, তাঁর জন্যই কাউকে ঘৃণা করল, তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে দান করল এবং তা থেকে বিরত থাকল তবে নিঃসন্দেহে সে নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।’
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো যে, সব ধরনের লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।
আমরা নিশ্চয়ই ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ এই প্রবাদ বাক্যটি শুনেছি। ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) এর এই প্রবাদ বাক্যটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। ইরানি অপর এক কবি বলেছেন, অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো, কেননা সে বিষাক্ত সাপ থেকেও ভয়ংকর। বিষাক্ত সাপ কেবল তোমার জীবনের ক্ষতি করবে কিন্তু অসৎ বন্ধু তোমার জীবনের সাথে সাথে তোমার ঈমানও শেষ করে দিবে। তাই ইসলাম ধর্মে অসৎ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য ব্যাপক তাগিদ দেয়া হয়েছে। অসৎ সঙ্গের পরিণতি সম্পর্কে একটি গল্প।
মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘কেউ অসৎ হলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমরা আমাদের মতো চলব।’ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষ ইচ্ছে করলেই বন্ধুর প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে না। অসৎ বন্ধুর গুণ অন্য বন্ধুকে প্রভাবিত করবেই। আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (রাঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যদি ভালো লোক খারাপ লোকের সাথে উঠাবসা করে তাহলে তার মাথায়ও খারাপ চিন্তা চলে আসে।‘ ইমাম জাওয়াদ এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘খারাপ বন্ধুর সাথে চলাফেরা করো না। কারণ সে খোলা তলোয়ারের মত, যার বাইরের চেহারা সূন্দর কিন্তু ফলাফল খুবই বিপজ্জনক।‘ নবী বংশের মহান ইমাম হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) বলেছেন, ‘একজন মুসলমানের জন্য এটা কখনই ঠিক নয় যে, সে একজন গুনাহগারের সাথে বন্ধুত্ব করবে।‘
কিন্তু কারো মধ্যে ভালো গুণ দেখে বন্ধুত্ব করার পরও যদি তার মধ্যে খারাপ গুণ দেখা যায় তাহলে কি করতে হবে? এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সে যদি নিজেকে সংশোধন করতে রাজি না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন, আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (রহঃ)।
‘ইমাম জাফর সাদেকের এক বন্ধু ছিল; যে সব সময় ইমামের সাথে ঘোরাফেরা করতো। একদিন ইমাম বাজারে গেলেন। সঙ্গে সেই বন্ধু ও তার কাজের ছেলেটি ছিল। বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কাজের ছেলেটি কৌতুহল বশতঃ এটা ওটা দেখছিল এবং মাঝে মাঝে পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছিল। এতে সে তার মনিবের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পড়ল। আর এদিকে ইমাম ও তার বন্ধুটি বাজারের মাঝখানে চলে গেল। হঠাৎ পেছনের দিকে তাকিয়ে কাজের ছেলেকে না দেখে ইমামের বন্ধুর মেজাজ বিগড়ে গেল। কিছুকক্ষন পর ছেলেটি ফিরে এলে মনিব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ইমামের সামনেই সে কাজের ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিল। লোকটির অশ্লীল কথাবার্তা শুনে ইমাম অবাক হয়ে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হায় আল্লাহ! একি করলে তুমি! ছেলেটির বাপ-মা তুলে গালি দিলে? আমি তো মনে করেছিলাম তুমি একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। এখন দেখছি সামান্য তাকওয়াও তোমার মধ্যে নেই !’
ইমামের কথা শুনে লোকটি বলল, আপনাকে আর কি বলব, এই ছেলেটি আসলেই বদ। তার মা সিন্ধু থেকে এসেছিল। ওই বেটির জন্মেরও কোন ঠিক ছিল না। তাছাড়া সে মুসলমানও ছিল না। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছু বলা মোটেও অন্যায় হয়নি।’
ইমাম বললেন, ‘আমি জানি ওই মহিলা একজন অমুসলিম ছিল। কিন্তু তোমার জানা দরকার, প্রত্যেক ধর্মেরই নিজ নিজ আইন-কানুন আছে। একজন অমুসলিম তার নিজ ধর্মের আইন অনুযায়ী বিয়ে করলে অশুদ্ধ হয় না। তাদের বিয়ের পর সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করলেও তা অবৈধ হয় না। তুমি ছেলেটির মাকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দিয়েছো। তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের অবসান হলো। এ ঘটনার পর ইমাম জাফর সাদেকের সাথে ওই লোকটিকে আর কখনই দেখা যায়নি।’
ইমাম জাফর সাদেকের মত আমাদেরও অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত। তবে তাই বলে একেবারে বন্ধুহীন থাকলে চলবে না। কারণ বন্ধুহীন জীবন নাবিকবিহীন জাহাজের মতো। একজন প্রকৃত বন্ধুই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অংশীদার হয়। প্রকৃত বন্ধুই পারে আত্মার আত্মীয় হয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে রাখতে। নিটসে বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে প্রাণ রক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেল, সে একটি গুপ্তধন পেল।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত? ইমাম গাযযালী (রহঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং ৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল-
১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ
২.বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং
৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান
ফরাসি এক প্রবাদে বলা হয়েছে, ‘বন্ধুত্ব হলো তরমুজের মতো। ভালো একশটিকে পেতে হলে এক কোটি আগে পরীক্ষা করে দেখতে হয়। ‘রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই বন্ধুত্ব যদি করতে হয় তাহলে ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত।
পাঁচ ব্যক্তিকে বন্ধু বানানো যাবে না:
(১)মিথ্যাবাদী
(২)নির্বোধ
(৩)কৃপণ
(৪)কাপুরুষ এবং
(৫)ফাসেক ব্যক্তি
বন্ধুর হক : ইসলাম কি নির্দেশ দেয়?
বন্ধু-বান্ধবকে নিকটতম আত্নীয়-স্বজনদের সঙ্গে পাশাপাশি স্থাপন করে উল্লেখ করা হয়েছে, বন্ধু-বান্ধব এমন একটি বন্ধন যা আত্নীয়-স্বজনের সঙ্গে বন্ধনকেও অনেক সময় হার মানিয়ে ফেলে। ইসলামে বন্ধুর হক সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেমন-
(১) যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার আকীদা-আমল, লেন-দেন, চাল-চরিত্র ব্যবহার উত্তমরুপে যাচাই করে নিতে হবে। যদি তার মধ্য উক্ত বিষয়গুলোর পাওয়া যায় তাহলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যায়। নতুবা দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। হাদীসে অসৎ সঙ্গ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ এসেছে। অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষ দর্শনেও এর ক্ষতিসমূহ উপলদ্ধি করা যায়। উপযুক্ত মানুষ পেলে বন্ধুত্ব করতে বাধা নেই, বরং সত্যিকারের বন্ধুত্ব বড়ই সুখকর এবং উপকারী।
(২) নিজের জান-মাল তার জন্য উৎসর্গ করতে কৃপণতা করা যাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ্ তায়ালা তার প্রয়োজনও পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কনো মুসলমানের একটি বিপদ দূর করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিনে ঐ সাহায্যকারীর একটি বিপদ দূর করে দিবেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
(৩) মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ তার থেকে প্রকাশ পেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে হবে ।ঘটনাক্রমে মনোমালিন্য দেখা দিলে তৎক্ষনাৎ সর্ম্পক ঠিক করে নিতে হবে ।সাধারণ ব্যাপারকে দীর্ঘ করা যাবে না।তাছাড়া বন্ধুদের সংশোধন ও প্রশিক্ষণ কাজে কখনো অলসতা করা যাবে না।নিজের বন্ধুদের মধ্যে এমন কিছুর অভ্যাস তৈরী করতে দেয়া যাবে না যা সংশোধন কিংবা প্রশিক্ষণের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়(যেমন-আত্মার সন্তুষ্টি ও অহংকার)।বন্ধুদেরকে সর্বদা তাদের ভুলত্রুটিসমূহ স্বীকার করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে।তিনিই প্রকৃত বন্ধু যিনি সচেতন মস্তিষ্কে একে অন্যের প্রতি খেয়াল রাখেন।রাসূল (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের আপন ভাইয়ের আয়না।সুতরাং সে যদি তার ভাইয়ের মধ্যে কোন খারাপ কিছু দেখে তাহলে সেটা তার থেকে দূর করে দিবে।'[তিরমিযি]
(৪) বন্ধুর কল্যাণ কামনায় ত্রুটি করা যাবে না। সুপরামর্শদানে কৃপণতা না দেখানো এবং বন্ধুর পরামর্শও আন্তরিকভাবে শ্রবণ করা উচিত। বাস্তবায়নযোগ্য হলে গ্রহণও করা চাই। বন্ধুর জন্য দোয়া করবে এবং বন্ধুর নিকটও দোয়ার আবেদন করবে। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘একবার আমি রাসূল (সা.) এর নিকটে ওমরাহ করার অনুমতি চাইলাম, তিনি অনুমতি দেয়ার সময় বললেন, ‘হে ওমর! দোয়া করার সময় আমাদের কথাও মনে রেখো।’ হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘আমার নিকট এ কথা এত আনন্দদায়ক লাগলো যে, এর পরিবর্তে পুরো দুনিয়া দিয়ে দিলেও আমি এত খুশি হতাম না।’
ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব-ইসলাম কি বলে?
ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি-বিয়ে। সুতরাং শরীয়তের বাধা না থাকলে এবং বিয়ের জন্য উপযুক্ত মনে হলে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিবে। প্রস্তাব গৃহীত হলে বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলবে। প্রস্তাব গৃহীত না হলে ভুলে যাবে। ভুলে না যাওয়ার মানে হচ্ছে, শয়তানের পক্ষ থেকে বিপথগামী হওয়ার জন্য দরজা খুলে রাখা।
বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয় এজন্য যে, ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনো পরনারী কোনো পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায়না। ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনুভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবীরা গুনাহ। (মুসলিম)
অপর হাদিসে বলা হয়েছে, ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখনই কোনো পুরুষ, পর নারীর সঙ্গে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। (তিরমিযী)
অতএব এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অমুসলিমদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ: ইসলাম কি সমর্থন করে?
অমুসলিমদের সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব দ্বারা নিজের দ্বীনের চেয়ে অমুসলিমের দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিংবা স্বীয় দ্বীনের ওপর অমুসলিমের কথাকে প্রাধান্য দেয়ার মত আবেগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এক কথায়, কোনো মুসলমানের জন্য অমুসলিমের সঙ্গে আন্তরিক ও গভীর সম্পর্ক স্থাপন জায়েয নয়।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৫১)
তবে তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা, বিপদে সহযোগিতা করা, প্রতিবেশী হলে খোঁজ-খবর নেয়া ইত্যাদি শুধু জায়েজই নয়, উত্তম। ‘আল্লাহ কেবল তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিষ্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।’ (সূরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)
পরিশেষে…বন্ধুত্ব হতে হবে পরকালের কল্যাণে। আর পরকালের কল্যাণে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্ধু নির্বাচনে একজন মানুষ হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ঈমানদার। যা প্রিয়নবী (সা.) ঘোষণা করেছেন, তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে (কাউকে) ভালোবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।’ (আবু দাউদ)
আল্লাহ তায়ারা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব লাভে কোরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তায়ালা যেন মুসলিম উম্মাহকে সৎ হওয়ার এবং সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার এবং আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন করার তাওফিক দান করেন। আর্রাহুম্মা আমীন।