লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন : নরসিংদী শহরের মেঘনা নদীর তীরে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী বাউল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা। বুধবার থেকে শুরু হওয়া বাউল মেলা চলবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক শত বাউল সাধক এ মেলায় যোগ দিচ্ছে বলে আয়োজকরা জানায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু এ মেলায় অংশ নিবে।
বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৬শ বছর ধরে মাঘী পুর্নিমা তিথীতে শহরের কাউরিয়াপাড়ায় অবস্থিত শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়ায় এই মেলার আয়োজন করা হয়। এর এক মাস পূর্বে জেলার শিবপুর উপজেলার তেলিয়া বাজারে পূজা অর্চণার মাধ্যমে মেলার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। সেই অনুয়ায়ী আগামীকাল বুধবার জগৎবন্ধু ঠাকুরের মহাপ্রসাদ বিতরণ ও শুক্রবার দেবতা ব্রহ্মার পূজা মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে।
শহরের কাউরিয়া পাড়া এলাকায় নরসিংদীর নতুন লঞ্চ টার্মিণালের পাশে বাউলের আখড়া। এই আখড়ায় বাউল ঠাকুরের অন্তধান হয়েছিল। বাউল আখড়ায় জগন্নাথ দেবতার মন্দির রয়েছে। মন্দিরে মহাবিষ্ণুর পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা, জগন্নাথ দেবতার প্রতিমা, মা গঙ্গার (৩৩ কোটি দেবতার) গট, নাগ দেবতার বিগ্রহ ও শিবলিঙ্গ রয়েছে। যা বাউল ঠাকুর নিজে প্রতিস্থাপন করে গেছেন বলে কথিত রয়েছে। পাশে রয়েছে বাউল ঠাকুর ও মাতাজির সমাধি মন্দির। সবার মধ্যিখানে রয়েছে উপাসনার জন্য বিশাল একটি আটচালা মন্দির।
সপ্তাহব্যাপী এ বাউলের মেলা আয়োজন নিয়ে চলছে মহা ধুমধাম। বাউল ভক্ত সাধুরা আখড়ায় আসা শুরু করেছে। মেলায় আগত বাউলরা বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করবে। তবে সেই সঙ্গীত প্রথাগত বাউল সঙ্গীত নয়, মানবতার গান। এই গান কোন পুঁথিতে লিপিবদ্ধ নেই। কয়েক শত বছর ধরে গুরুর নিকট থেকে আরাধনা করে শিষ্যরা এই গান আয়ত্বের ক্ষমতা অর্জন করেন।
ভারতের আগরতলা থেকে এসেছেন বেশ কয়েকজন বাউল ভক্ত। তাদেরই একজন মুকুল দে বলেন, মেলার সময় ঘনিয়ে আসলে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারিনা। মনের টানেই প্রতিবছরই মেলায় অংশ নেয়ার জন্য নরসিংদীতে আসি। এখানে আসলে সকল বাউলের দেখা পেয়ে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।
বাউল আখড়ার তত্বাবধায়ক ডা. প্রানেশ কুমার বাউল ঝন্টু বলেন, মানুষের মধ্যে সকল ধর্মকে মানবতার উর্দ্ধে তোলার জন্যই বাউল ঠাকুরের আর্বিভাব হয়েছিল। তাই বাউল মেলায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশ নেয়। মেলায় বাউলরা গানে গানে মানব কল্যাণ কামনায় আরাধনা করা হবে।
এই উপলক্ষ্যে মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে বিশাল মেলা। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউলের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছে। মেলায় কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরী কুটির শিল্পসামগ্রী লৌহজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, মিষ্টির দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেছেন অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও শিশুদের আকৃষ্ট করতে মেলায় নাগর-দোলাসহ নানা বিনোদন মূলক রাইডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ শফিউর রহমান বলেন, সপ্তাহ ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই বাউলের মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাউলের আখড়া ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।