নরসিংদী প্রতিদিন: সরকারি কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন প্রদানের দাবীতে বাংলাদেশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভায় বুধবার সকাল ১১টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পৌরসভা অফিস চত্বরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১ ঘন্টা কর্ম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।
নরসিংদী জেলা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের সভাপতি ও মাধবদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকোশলী মনিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন মাধবদী পৌরসভার সচিব কাজী মো. মোস্তফা কামাল (মনির), পৌরসভার কর নির্ধারক মো. আতাউর রহমান, সহকারী কর আদায়কারী মো. হানিফ ও টিকাদানকারী সুপারভাইজার মো. বজলুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিভাগীয় প্রচার সম্পাদক ও মাধবদী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রীতেশ পোদ্দার। অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তাগণ বলেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে পৌরসভা প্রশাসনিক একাংশরূপে নির্বাহী বিভাগের একটি অংশ এবং ৫৯(২) অনুচ্ছেদে পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে সরকারি কর্মচারী মর্যাদা প্রদান করেছেন। যা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০১০ (২০১০ সনের ৫২নং আইন) এর ৫ ধারায় স্বীকৃত। একই আইনে ১২৬ ধারা অনুযায়ী পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং পৌরসভার পক্ষে কাজ করার জন্য যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি দন্ডবিধির ধারা ২১ অনুযায়ী জন সেবক (Public Servant).
জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার প্রারম্ভে পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের অর্ন্তভ’ক্তির নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কর্মচারী ফেডারেশনের সমাবেশে কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পেনশন সুবিধা সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে প্রদানের ঘোষণা করেছিলেন এবং সে লক্ষ্যে তিনি কাজও করেছিলেন। কিন্তু অদ্যবধি তা বাস্তবায়িত হয় নাই।
বক্তাগণ আরও বলেন যে, পৌরসভার জনগণের মৌলিক সেবা সমূহ যেমন, সুপেয় পানি সরবরাহ, ভৌত-অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা আলোকিত করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ উন্নয়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, চিত্ত বিনোদন, জনসৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি প্রদান করে থাকেন। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ৬৫% আসে শহর অঞ্চল থেকে যাহা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদান অনেক বেশি। অথচ সেই পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরকারী রাজস্ব তহবিল হতে বেতন ভাতা পাচ্ছে না। আজ তারা পৌরসভা হতে নিয়মিত বেতন ভাতা না পাওয়ার কারণে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সরকার ঘোষিত পে-স্কেল প্রদান করা হলেও অনেক পৌরসভায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। দেশের শতকরা ৭৫% ভাগ পৌরসভা ৬ থেকে ২২ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। চাকুরী হতে অবসর গ্রহনের পর তারা কোন পেনশন বা গ্র্যাচুইটি পাচ্ছে না। ফলে অবসর জীবনে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অথচ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (LGED), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর (DPHE), ওয়াসা (WASA) স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের অধীন ১৭টি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে বেতন-ভাতা ও পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। অথচ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সংবিধানিক স্বীকৃতভাবে নির্বাহী বিভাগের অন্যান্য দপ্তরে কর্মচারীগণের ন্যায় সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে বেতন-ভাতা ও পেনশন সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। বক্তাগণ আরও মনে করেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভূক্ত রেখে তা করা সম্ভব নয়। পৌরসভার প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন সুবিধা সরকারি রাজস্ব তহবিল হতে প্রদান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট বক্তাগণ আকুল আবেদন জানান।