লক্ষন বর্মন, নরসিংদী : দীর্ঘ ১৪ বছর পর আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা যুবলীগের সম্মেলন। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এই সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের ভোটে নয় মন্ত্রী ও এমপিদের পছন্দে নেতৃত্ব নির্বাচিত হচ্ছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরুর (বীর প্রতিক) সঙ্গে এমপিদের সমঝোতা অংশ হিসেবে সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে জেলা যুবলীগের সভাপতি হচ্ছেন জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ। ফলে সম্মেলনকে ঘিরে মোসলেহ উদ্দিন ভূঞা স্টেডিয়াম ও শহর জুড়ে সম্মেলনের সাজে সাজলেও এই দুই নেতার বাইরে অন্য কারও প্রচারণা কিংবা তৎপরতা চোখে পড়েনি।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে একরামুল ইসলাম সভাপতি ও বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ এই জেলারই সন্তান। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতির নানা মেরুকরণের কারণে তাদের নানা প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে সংগঠন চালাতে হয়েছে। তাদের হাত ধরেই যুবলীগ বর্তমানে জেলা ব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামোর উপর দাড়িয়েছে। বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামেও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর নরসিংদী জেলা যুবলীগের সম্মেলনের গুঞ্জন উঠলে দুই প্রধান পদে একাধিক প্রার্থীর নাম রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাকির, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল বাছেদ ভূঞা ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস শামীম নেওয়াজ ও পলাশ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ তুষারের নাম আলোচিত হয়। তবে জেলার রাজনীতির নানা সমীকরণে হাই কমান্ডের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় কিংবা রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে অনেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
সর্বশেষ যুবলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে গত বুধবার দুপুরে পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য্যালয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতিক) জেলার সাংসদদের নিয়ে সভা করেছেন। এ সময় নরসিংদী-০৪ আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য এ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঞা, নরসিংদী-০২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খাঁন পোটন, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খাঁন দিলীপ ও নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলসহ জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতি পদে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও আবদুল বাকির ও সম্পাদক পদে শামীম নেওয়াজের প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রতিমন্ত্রী হীরু সভাপতি আবদুল বাকিরের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। ফলে আগামী সম্মেলন সভাপতি পদে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম নেওয়াজকে একক প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল বাকির বলেন, আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় আর এগুইনি। এই মুহুর্তে রাজনীতির যে অবস্থা, কাঁদা ছুরাছুরি, মান সম্মান নিয়ে ঘরে থাকাই যায়না। তাই কারও সঙ্গে মন কষাকষি করে যুবলীগের নেতৃত্বে যেতে চাইনা।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম নেওয়াজ বলেন, আমি বিগত দিনে নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ও জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। অতীতে সারা জেলায় যেভাবে ছাত্রলীগের জোয়ার তুলেছিলাম, যুবলীগের নেতৃত্ব পেলে আগামী দিনে যুবলীগেরও জোয়ার বইবে। এই সম্মেলন হবে সারা বাংলাদেশের জন্য মডেল সম্মেলন। পুরো নরসিংদীতে রবিবার তারুণ্যের জোয়ার বইবে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, বিগত ১৪ বছর যুবলীগকে নরসিংদীর প্রতিটি উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামে বিস্তৃত করেছি। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে স্বোচ্ছার ছিলাম। জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব যদি চায় তাহলে আবারও আমি যুবলীগের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত আছি।
নরসিংদী-০২ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা। বিগত দিনে রাজনীতির মাঠে তার বলিষ্ঠ পদচারণা ছিল। অপরদিকে শামীম নেওয়াজও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। তারা দুজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছে। অন্য কেউ তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধীতায় যাবেনা বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে মোসলেহ উদ্দিন ভূঞা স্টেডিয়াম। পুরো স্টেডিয়ামকে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শহরজুড়ে পদ প্রত্যাশী প্রার্থীরা ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছে। করেছে তোরণ। তবে সভাপতি পদে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম নেওয়াজ ছাড়া অন্য কারও প্রচালনা পরিলক্ষিত হয়নি। এর মাধ্যমেও একক প্রার্থীর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
রবিবার অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক), নরসিংদী-৫ আসনের সাংসদ রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু ও নরসিংদী ০৪ আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। প্রধান বক্তা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। জেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাংসদ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।