সিরাজী এম আর মোস্তাক
শিক্ষানবিস আইনজীবী, ঢাকা।
যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাদের রেখে, যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পায় তাদের আটক করা আইনসম্মত নয়। এখন এসএসসি
পরীক্ষা শুধু নয়, একেবারে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য বড় অংকের ঘুষ লেনদেন হয়। তা স্বীকার
করেছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়। তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ করেছেন, ঘুষ অবশ্যই খাবেন তবে সহনীয় মাত্রায়। তার এ ঘোষণায়
প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন প্রকাশ্য বিষয়। সুতরাং চলতি সপ্তাহে প্রশ্ন পাবার অপরাধে যে শত শত নাগরিক আটক হয়েছে, তারা
আইনগতভাবে অপরাধী নয়। তাই সরকার যেন অসহায় নাগরিকদের ছেড়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী মূল হোতাদের দৃষ্টান্তমূক শাস্তি দেয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা সুনাগরিক নয়। তাদের প্রতি অনুকম্পা কাম্য নয়।
বেগম জিয়ার রায় ও আটকের বিষয়টিও আইনসম্মত নয়। পৃথিবীর কোনো আইনেই মূল অপরাধী বা ১নম্বর আসামীকে কম সাজা
দিয়ে সহযোগী অপরাধীদের অধিক সাজা দেয়ার নজির নেই। মূল অপরাধীর সাজা কমালে, সহযোগীদের সাজাও কমতে বাধ্য।
এটাই আইনি বিধান। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া মূল বা ১নম্বর আসামী। তাকে বিশেষ বিবেচনায় ৫বছর
সাজা দিয়ে তার সহযোগীদের ১০বছর সাজা দেয়া হয়েছে। এটি সম্পুর্ণ আইন বহির্ভূত। বিচারক আইনগতভাবে এ রায় প্রদান
করেননি। তার এ আইনবহির্ভূত রায় প্রদানের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এ সুযোগ নেই। বিচারক
অভিশংসন অথবা বিচারিক রায়ের শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা বিশ্লেষণের জন্য গঠনমূলক প্রকাশ্য মাধ্যম বা সংস্থা নেই।
১৯৭১ সালে সংগঠিত জঘন্য হত্যাকান্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৯৫ পাকিসেনার বিচার না করে বাংলাদেশের
যুদ্ধবিধ্বস্থ অসহায় নাগরিকদের সহযোগী হিসেবে বিচার করা বেআইনি। তখন এদেশের সাড়ে সাত কোটি নাগরিক ছিল
যুদ্ধবিধ্বস্থ। তারা যেভাবে পেরেছে, আত্মরক্ষা করেছে। সুযোগ পেলে দেশের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা করেছে। ফলে ৩০লাখ বাঙ্গালি
প্রাণ হারিয়েছে। এসকল শহীদের ঘাতক ও মূল অপরাধী ১৯৫ পাকিসেনার বিচার বাদ রেখে এদেশের যুদ্ধবিধ্বস্থ নাগরিকদের
বিচার মোটেও আইনসম্মত নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রচলিত বিচার বেআইনিভাবে
পরিচালিত হয়েছে। এতে ১৯৫ পাকিসেনাদের বিচার হয়নি। ফলে প্রতিয়মান হয়েছে, ১৯৭১ সালে সকল হত্যাকান্ড ও জঘন্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ শুধু বাংলাদেশিরাই করেছে। ৩০ লাখ শহীদের খুনি শুধু বাংলাদেশিরাই, পাকিস্তানিরা নয়। যেহেতু
আদালতের সামনে আন্তর্জাতিক শব্দটি রয়েছে, তাই বিচার্য্য বিষয়টি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে।
শেয়ার মার্কেট ও বিভিন্ন ব্যাংকের শত-সহস্র কোটি টাকা লুটপাটকারীদের আজও বিচার হয়নি। তাদের লুটপাটে হাজার হাজার
মানুষ পথে বসেছে। বহু মানুষ আত্মহুতি দিয়েছে। তাদের সন্তানেরা এতিম-মিসকিন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঐসব লুটপাটকারীদের
আইনের আওতায় না আনাও বেআইনি।
মুক্তিযোদ্ধাভাতা এবং কোটাও বেআইনি। স্বাধীনতার স্থপতি ও বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে এটি
ছিলনা। তাঁর সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ৩০লাখ শহীদ বিভাজন ছিলনা। দেশের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুর
শাহাদাতের পর স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদেরা প্রায় ২লাখ ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তারা বঙ্গবন্ধু, জাতীয়
চারনেতা, এমএজি ওসমানী ও ৩০লাখ শহীদসহ বহু বীরযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বঞ্চিত করে। অবৈধ তালিকাভুক্তদের
জন্য বড় অংকের ভাতা ও তাদের সন্তানদের জন্য ৩০ভাগ কোটা চালু করে। এতে দেশে মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা বৈষম্য ও
বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
এভাবে অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি হচ্ছে। উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহে আইনের সঠিক প্রয়োগ একান্ত কাম্য।