এম. এ. সালাম রানা, নরসিংদী প্রতিদিন: নরসিংদী জেলার মাদবদী, বেলাব, শিবপুর ,পলাশ ও মনোহরদী, এলাকার ভূমি অফিসে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যসহ চরম গ্রাহক হয়রানী বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমি অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার, তহসিলদার, অফিস সহকারী, জারিকারক, পিয়ন-দালাল এরা সবাই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। মাধবদী ভূমি অফিসের অবৈধ লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে কর্মচারী-দালাল চক্রের বিশাল এক সিন্ডিকেট। ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাপক অভিযোগ থাকা স্বত্ত্বেও লাগামহীনভাবে ঘুষ দুর্নীতি চলে আসছে। সিন্ডিকেটের ঘুষ বাণিজ্য চরমাকার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহক সাধারন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মাধবদী এলাকাটি নরসিংদীতে বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এই এলাকার ভূমির দাম বেশি তাই ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উৎকোচের পরিমানও বেশি। অভিযোগ উঠেছে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা পরবর্তীতে তাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানায়, মাধবদী ভূমি অফিসের দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় ঘুষ বাণিজ্য যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে অপরদিকে গ্রাহক হয়রানী ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুক্তভোগীরা জমি খারিজ করতে গেলে, দায়িত্বরত এম.এল.এস নুরুন্নবী তাদের নিকট থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত হিসেবে নিয়ে থাকে। উৎকোচের টাকা না দিলে জমির খারিজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এমন কি যারা এসব বিষয়ে সরকারী কর্মকতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন; তাদের নানাভাবে হয়রানি, নাজেহালসহ হুমকি ধামকি দেয়া হয়।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, মাধবদী ভূমি অফিসের অসাধু চক্রটি ঘুষ বাণিজ্যের বিনিময়ে জমির বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমির ফাইল গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। ঘুষ দিতে না পারলে একজনের জমি অন্যজনের নামে খতিয়ান করে দেয়া হয়।
আরো জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে মাধবদী ভূমি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উৎকোচের বিষয়ে অনেক লিখিত অভিযোগ থাকা স্বত্বেও বিগত সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গ্রাহক হয়রানী চরমাকার ধারন করছে। বাবার নামীয় জমির খতিয়ান সৃজনের জন্য জনৈক ব্যক্তি সম্প্রতি এই ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন, ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা তার নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ গ্রহন সাপেক্ষে খতিয়ান সৃজন করার কথা থাকলেও সেটি এখনো পর্যন্ত করা হয়নি। অসাধু চক্রটি নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, দাখিলা প্রহণ, পর্চা, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, খাজনা দাখিল, খতিয়ান ইস্যুসহ হেন এমন কোন কাজ নেই যা থেকে এই চক্রটি তাদের নিকট থেকে উৎকোচ আদায় ব্যতিরেকে সঠিকভাবে কাজ আদায় করে আসতে পারে। কাননগো, সার্ভেয়ার, ইউনিয়ন তহসিলদার ও দালাল চক্র প্রতিদিন জমির মালিকদের নিকট থেকে ঘুষ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অপর ভুক্তভোগিরা বলেছেন; দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে অভিযোগ উঠলে অস্বীকার করতে সুবিধা হয়। অভিযোগ উঠলে বলে থাকেন ওই নামের কোন লোক আমাদের অফিসে নেই। মাধবদী বাণিজ্যিক এলাকায় নিষ্কণ্ঠক জায়গা কিনলেও বিনা হয়রানিতে ওই জায়গার মালিকানা পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যদি ভূমি নিয়ে কোনপ্রকার জটিলতা থাকে তা নিরসন করতে গ্রাহকদের মোটা অংকের উৎকোচসহ চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিটি নামজারীতে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়, ক্ষেত্র বিশেষে তা ১লাখ টাকা পর্যন্ত উঠে।
অপর ভুক্তভোগী জানায়; খাজনা আদায়কালে ঘুষ নেয়ার জন্য নামজারীর ফাইলে ইচ্ছা করে কাঠপেন্সিল দিয়ে একটি কাগজের সঙ্গে ‘রেকর্ডে মিল নেই’ কিংবা ‘দখল নাই’ মর্মে লিখে দেয়া হয়। যাতে প্রকৃত ভূমির মালিককে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে উৎকোচ নেয়া সহজ হয়। এ অজুহাতে মাধবদী পৌর ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহন ও আদায় করে থাকেন। অনুরুপ অবস্থা খাজনা দাখিল ও খাজনা আদায়ের নামেও মাধবদী ভূমি অফিসের গ্রাহকদের হয়রানিসহ চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
ঘুষ দুর্নীতি সম্পর্কে মাধবদীর এম. এল. এস. নুরুন্নবীর দুর্নীতির কথা স্বীকার করে বলেন, সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান, অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর আলমসহ সকলেই ঘুষ বাণিজ্যের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। টাকা না দেয়া হলে কোনো কাজ হয় না এই ভূমি অফিসে। তার মতে ঘুষ দুর্নীতি বিগত ৭/৮ শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি হঠাৎ করে বন্ধ করা যাবে না, পর্যায়ক্রমে ঘুষ-বাণিজ্য হ্রাস করতে হবে।