নরসিংদী প্রতিদিন ডেস্ক, রবিবার, ০৪ মার্চ ২০১৮: ফাল্গুনী হাওয়ায় গাছে গাছে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। চারদিকে স্বর্ণালী শোভা। যেমন তার সৌন্দর্য, তেমনি তার ঘ্রাণ। মুকুলভরা ডালে পাতাদের হাতছানি। মৌ মৌ ঘ্রাণে মাতোয়ারা মৌমাছির দল। গুন গুন সুরে মুকুলের ওপর বসে চলছে ছন্দের নাচন। রাজশাহী অঞ্চলের সারি সারি আমগাছে যেন বসেছে হলুদ আর সবুজের মিলনমেলা। তবে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলন আশা করছেন আম ব্যবসায়ীরা।
উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার প্রায় সব এলাকাতেই এখন রয়েছে বড় বড় আমবাগান।
রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। এখানে প্রায় আড়ইশ জাতের আম উৎপন্ন হয়। তবে এবার ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আমরুপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে। গাছে গাছে বাহারি জাতের আম এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। সব ভেবে চাষিদের মনে উঁকি দিচ্ছে মুনাফার আগাম বার্তা। গাছের মুকুল কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষিরা।
আমচাষি নূরুল আমিন জানান, আমগাছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা ছাড়া আমচাষিদের এখন অন্য কিছু করার ফুরসত নেই। মুকুলে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে, যেন মুকুলে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। আবার গুটি ধরার পর আরেক দফা স্প্রে করা হবে।
আমচাষি ফরিদ শেখ জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। কয়েকদিন আগে রাজশাহীর আশপাশের এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমগাছের উপকার হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বর্তমানে শঙ্কিত রয়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি অনূকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন হবে বলেও জানান তিনি।
আমচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, মুকুল পুরো ফোটার আগে গাছে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেছি, যেন মুকুলে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়।
আম ব্যবসায়ী এনতাজ আলী জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আবহাওয়া। আবহাওয়া যদি শেষ পর্যন্ত অনুক‚লে থাকে, তবে রাজশাহীর আমচাষিরা এবার বড় ধরনের মুনাফা করবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিম উদ্দিন জানান, এ বছর রাজশাহীর মোট ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ৮৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৪টি আম গাছে ৮০ শতাংশ আমের মুকুল এসেছে। আগামী দিনগুলোয় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখান থেকে প্রায় দুই লাখ আট হাজার ৬৬৪ মে.টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে গাছে কোনো পোকার আক্রমণ দেখা দিলে নির্ধারিত মাত্রানুযায়ী কীটনাশক দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।