স্পোর্টস ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,রবিবার, ১৮ মার্চ ২০১৮:
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কোনোটিতেই জয় পায়নি বাংলাদেশ। আধুনিক ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে দুদল এখন পর্যন্ত খেলেছে মাত্র সাতটি ম্যাচ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ভারতের বিপক্ষে এখনো জয়ের দেখা মেলেনি। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচকে সামনে রেখে এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, আজ পারবে তো বাংলাদেশ?
অবশ্য এটাও সত্যি, পরিসংখ্যান দিয়ে খেলায় জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় না। এসব নিছকই সংখ্যা। পরিসংখ্যান বদলে যেতে পারে যেকোনো সময়। বিশেষ করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের দাপুটে জয়ের পর সম্ভাবনাটা বেড়ে গেছে আরও। সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর দিনে হেরে যেতে পারে বিশ্বের যেকোনো দল।
টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। তবে বাছাই পর্বে টিকতে না পারা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে অংশগ্রহণ শুরু করে ২০০৯ সালে। বাংলাদেশ-ভারত সর্বপ্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিও খেলে ২০০৯ সালে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৬ জুন নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ এই ম্যাচটি হারে ২৫ রানে। ভারতের দেওয়া ১৮১ রানের টার্গেট পেরুতে গিয়ে ১৫৫ রানেই ভেঙ্গে যায় টাইগারদের দূর্গ।
এরপর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০১৩-১৪ আসরে ২৮ মার্চ নিজ দেশের মাটিতেই টাইগার বাহিনীর বিপক্ষে ৮ উইকেটে জয় পায় ভারত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে হোম গ্রাউন্ড শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ১৩৯ রানের লক্ষ্য খুব সহজেই পার করে যায় ধোনি বাহিনী।
এর পরের ম্যাচ এশিয়া কাপের ২০১৫-১৬ আসর। হোম গ্রাউন্ড শেরে বাংলায় মাশরাফিরা হারে ৪৫ রানে। তবে এই আসরে ভারতের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলে ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাত্র ১২০ রান করে সব উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভারতও সহজেই এই রান তাড়া করে ৮ উইকেটে জয় পায়। ফাইনালে হারের কারণে কেঁদেছিল বাংলাদেশ। খুব সহজে হাতে আসা জয় মুশফিক-রিয়াদের ছোট্ট ভুলে কারণে হেরে যায় বাংলাদেশ।
একই বছর ২০১৫-১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর চিন্মস্বামী স্টেডিয়ামে প্রায় জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র এক রানে হেরে যায় টাইগার বাহিনী। ম্যাচটি জিততে পারলে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের।
পরের ম্যাচ দুটি এবছর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য নিদাহাস ট্রফির। দুটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচটিতে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান করে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। কিন্তু রোহিত শর্মার দল ৪ উইকেটের বিনিময়ে জিতে নেয় ম্যাচটি। পরের ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশকে ১৭৬ রানের লক্ষ্য দেয় ভারত। মুশফিকুর রহিম এই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও ১৫৯ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
এ তো গেল শুধু ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টির সমীক্ষা। পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে হারের রেকর্ডও রয়েছে বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ রানে হার। এরপর মিরপুরে
২০১২ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ রানে হার। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হার। এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৯ রানে হার।
তবে ভারতের বিপক্ষে হারুক কিংবা অন্য টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অবস্থা পাল্টেছে। নিদাহাস ট্রফির গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাপুটে জয় যার প্রমাণ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এখন বাংলাদেশ বন্দনা। কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল তো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে মেতে উঠেছে নানা সমালোচনায়।
সর্বভারতীয় চ্যানেল ‘আজ তাক’ তো টাইগার ক্রিকেটারদের বেতমিজ আখ্যা দিয়ে দিয়েছে। লঙ্কানরা আরও এক ডিগ্রি উপরে। নিদহাস ট্রফির ১৬ তারিখের ম্যাচটি হারার পর তারা তাদের মিডিয়ায় ফলাও করে বাংলাদেশের সমালোচনা করে নানান সংবাদ পরিবেশন করেছে।
তবে সমালোচনা থাকলেও আলোচনায় ছিল বাংলাদেশের আগ্রাসী খেলার ধরন। জয়ের জন্য মরিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন যে কোনো সময় জয় তুলে নিতে পারে। তাদের খেলায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শচীন সৌরভও বাহবা দেন। এমনকি বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনও বাংলাদেশের জয়ে উচ্ছ্বস প্রকাশ করে টুইট করেন।
গত ম্যাচের পর ভারতীয় ক্রিকেটাররাও সমীহ করছেন বাংলাদেশকে। এক সাক্ষ্যাৎকারে ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিকও জানিয়েছেন, চাপে থাকতে হয় তাদের কেননা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ জেতা এখন কঠিন।