খন্দকার শাহিন,নরসিংদী প্রতিদিন, বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ ২০১৮: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। গত ৯ বছর ধরে তাদের আন্দোলন করার কথা কেবল শুনে আসছি। তবে কখনও তাদের আন্দোলন করতে দেখিনি। তারা শুধু বলছে, আন্দোলন এই মাসে না, ওই মাসে। রোজার ঈদের পর না, কোরবানির ঈদের পর। এরপর আবার বলে পরীক্ষার পর। এরকম করতে করতে তারা ৯ বছর পার করেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে।’
বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকেলে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় উল্লেখ ছিল, কোনও দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ বিএনপি করতে পারবে না। কিন্তু সেই ধারা তারা রাতের আঁধারে বাদ দিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে তারা গঠনতন্ত্রই বদলে ফেলেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা মূলত দুর্নীতিকেই স্বীকৃতি দিয়েছে। বিএনপি এখন আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের দল।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি এখন আত্মস্বীকৃত দণ্ডিতের দল, উন্মাদের দল। কেউ দুর্নীতিবাজ হতে চাইলে বিএনপিতে যোগ দিন। দেওলিয়া হতে চাইলে বিএনপিতে যান।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের জিততে হবে। আমাদের বিকল্প হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি। এই শক্তি যদি বিজয়ী হয়, দেশ আবার অন্ধকারে যাবে। আবারও পেট্রলবোমা, আগুনে মানুষের প্রাণহানি হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমী পাখিরা দলে দলে ভিড় করে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা না থাকলে এই মৌসুমী পাখিরাও দল ছেড়ে চলে যাবে। তাই ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।’
তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘কোনো দাগী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। যারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে নিরীহ মানুষের জমি দখল করবে, তারা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ মাস পরপর মাঠ জরিপ করছেন। এই জরিপে জনমতে যিনি এগিয়ে থাকবেন, তিনিই দল থেকে মনোনীত প্রার্থী হবেন।’
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা জরিপে এগিয়ে থাকবেন, তারাই মনোনয়ন পাবেন। তবে মনোনয়ন পেতে দলের নাম ব্যবহার করবেন না, দলের সভানেত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার কথা দাবি করবেন না। প্রার্থী হন, কিন্তু দলের ক্ষতি করবেন না। আপনারা একে-অপরের নামে অপপ্রচার চালাবেন না। দলের কারও সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, মুকুল বোস, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নরসিংদী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আখতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঞা, নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খাঁন দিলীপ, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল, মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক, ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র শরিফুল হক, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল, মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায়, মনোহরদী পৌরসভার মেয়র আমিনুর রশিদ সুজন প্রমুখ।
এদিকে, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জনসভায় যোগদান ঘিরে নরসিংদীর আরশিনগরে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।