আল-আমিন মিয়া*
নরসিংদী প্রতিদিন,বৃহস্পতিবার,৫ এপ্রিল ২০১৮: পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। নববর্ষ ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসে মেলা। বর্ষবরণে জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলায় অধিকাংশ মাটির সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন এই উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। মেলায় চাহিদা থাকে নানান খেলনা ও মাটির জিনিসপত্রের।
সরেজমিনে জানা যায়, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার কুমারটেক পালপাড়া, টেঙ্গরপাড়া ও বরাব নামক গ্রামগুলোতে মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০টি পরিবার। এর মধ্যে উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে প্রায় ২০টি পাল পরিবার বসবাস করেন। বিভিন্ন উৎসবে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। মেলা উপলক্ষে পুরুষের পাশাপাশি নারী মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের নানান খেলনা। পহেলা বৈশাখের পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হবে খেলনাগুলোকে দৃষ্টিনন্দিত করতে বিভিন্ন রং দিয়ে সাজানোর কাজ।
পলাশ উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল, নারায়ণ চন্দ্র পাল, জয়কৃঞ্জ পাল, নিপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ফনিন্দ্র চন্দ্র পাল, দেবিন্দ্র চন্দ্র পাল ও ওমেল্য চন্দ্রসহ ওই গ্রামের অনেকেই তাদের মাটির খেলনা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান, তারা পৈতৃক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আমাদের কাজে ছেলেমেয়ে সবাই সহযোগিতা করে থাকে। একসময় সংসারে সবার মুখে ঠিকমত দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করানো সম্ভব ছিল না। তাই সংসারের খরচ জোগাতে দিপালী চন্দ্র পাল মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা শুরু করেন প্রায় ২০ বছর আগে। বর্তমানে সংসারের স্বচ্ছলতা এসেছে। খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, ছাঁচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো, রং করাসহ প্রায় সব কাজই তিনি করতে পারেন।
মাটির তৈরি নানা তৈজসপত্র রং করায় ব্যস্ত এখানকার আরেক মৃৎশিল্পী মনি রাণী পাল। তিনি জানান, আসছে বৈশাখী মেলা সামনে রেখে এক একটি পরিবার প্রায় দুই হাজার খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই রঙের কাজও শেষ করা হবে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে এসব খেলনা কিনে নিয়ে যায়।