ধর্ম প্রতিদিন,মঙ্গলবার,১০ এপ্রিল ২০১৮: প্রত্যেক ব্যক্তিই মৃত্যুর আগে তার আপনজনকে কিছু না কিছু বলে যান। কিংবা অসিয়ত করে যান। তেমনি আল্লাহর রাসূলও (সাঃ) মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) ডেকে চুপে চুপে কিছু কথা বলেন যান। সে কথাগুলো কি ছিল? হাদীসে এসেছে- عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ، فَسَارَّهَا بِشَيْءٍ فَبَكَتْ، ثُمَّ دَعَاهَا فَسَارَّهَا بِشَيْءٍ فَضَحِكَتْ، فَسَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَتْ: «سَارَّنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ يُقْبَضُ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ فَبَكَيْتُ، ثُمَّ سَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنِّي أَوَّلُ أَهْلِهِ يَتْبَعُهُ فَضَحِكْتُ» হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল সাঃ মৃত্যু-রোগকালে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে আনলেন এবং চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন; এরপর রাসূল (সাঃ) পুনারায় তাঁকে ডেকে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হাসলেন।পরে আমরা এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, রাসূল (সাঃ) যে রোগে আক্রান্ত আছেন এ রোগেই তিনি ইন্তেকাল করবেন।
এ কথাটিই তিনি আমাকে গোপনে বলেছেন।তখন আমি কাঁদলাম।আবার তিনি আমাকে চুপে চুপে বললেন, তাঁর পরিবার-পরিজনের মাঝে সর্বপ্রথম আমিই তাঁর সাথে মিলিত হব, তখন আমি হাসলাম। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪৩৩, ৪১৭০}
====================
ঘুমন্ত অবস্থায় নবীজিকে যখন হত্যা করতে আসে এক শত্রু
মহানবী (সা) একদিন একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। এইসুযোগে দাসুর নামের একজন শত্রু তাঁরপাশে এসে দাঁড়াল। শোরগোল করেসে মহানবী (সা) কে ঘুম থেকে জাগাল।
মহানবী (সা) ঘুম ভাঙলে চোখ খুলে দেখলেন, একটা উন্মুক্ত তরবারি তাঁর উপর উদ্যত। ভয়ানক শত্রু দাসুর চিৎকার করে উঠলো, ‘এখন আপনাকে কে রক্ষা করবে?’মহানবী(সা) ধীর শান্ত কণ্ঠে বললেন,‘আল্লাহ’। শত্রু দাসুর মহানবী (সা) এর এইশান্ত গম্ভীর কণ্ঠের আল্লাহ শব্দে কেঁপে উঠল। তার কম্পমান হাত থেকেখসে পড়ল তরবারি।মহানবী (সা) তার তরবারি তুলেনিয়ে বললেন, ‘এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে, দাসুর? সে উত্তর দিল কেই নেই রক্ষা করার।’ মহানবী (সা) বললেন,‘না, তোমাকেও আল্লাহই রক্ষা করবেন।’ এই বলে মহানবী (সা) তাঁকেতার তরবারি ফেরত দিলেন এবং চলেযেতে বললেন।বিস্মিত দাসুর তরবারি হাতে চলেযেতে গিয়েও পারল না। ফিরে এসেমহানবীর হাতে হাত রেখে পাঠকরলঃ ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুররাসুলুল্লাহ।’
=====================
সুন্দরী মেয়েদের বলির হাত থেকে যেভাবে রক্ষা করেছিল হযরত ওমর (রা:)
নীল নদ’ হল পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ। দৈর্ঘ প্রায় ৬৬৬৯ কিলোমিটার। এটি পৃতিবীর একমাত্র নদ, যা দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত।মিসরের নীল নদ সে দেশের কৃষিকার্যের প্রধানতম উৎস, কিন্তু উক্ত নদ প্রতি বছর শুকিয়ে যেত।তখন সে দেশের অধিবাসীরা প্রাচীন প্রথানুযায়ী একটি সুন্দরী কুমারীকে নীল নদের বুকে বলি দান করতো। ফলে নীল নদ পূর্বের ন্যায় প্রবাহিত হত। এ প্রসঙ্গে বলা যায়- কালের বিবর্তনে নীল নদের পানি ব্যবস্থাপনা জিনদের নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তারা ফি বছর বা প্রতি বছর নীল নদের পানি আটকিয়ে কৃষককুলকে জিম্মি করে রাখতো। প্রতি বছর একটি সুন্দরী নারীকে নীল নদে বলি দানের বিনিময়ে তারা পানি ছেড়ে দিত। পরবর্তীকালে হযরত ওমর (রাঃ) এর আমলে মিসরে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। সেখানকার প্রাদেশিক শাসনকর্তা হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এ অবৈধ কার্যের প্রতি হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করে দেন।
ফলে প্রতি বছরের মত নীল নদের পানি শুকিয়ে যায়।এদিকে নও মুসলিম কৃষকরা সুন্দরী নারী বলি দানের রেওয়াজ চালু রাখবে কিনা, এ ব্যাপারে হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর অভিমত জানতে চাইলে তিনি খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট এক নাতিদীর্ঘ পত্র লেখেন। পত্র পেয়ে হযরত ওমর (রাঃ) বিস্তারিত অবগত হলেন।নীল নদকে সম্বোধন করে চিঠির অপর পৃষ্ঠায় হযরত ওমর (রাঃ) উত্তর লিখলেনঃ ”ইন কুনতি তাজরী বিনাফসিকি, লা তাজরী। ওয়া ইন কুনতি তাজরী বি আমরিল্লাহ।” অর্থাৎ ” (হে মিসরের নীল দরিয়া!) যদি তুমি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হও, তাহলে তোমার পানি আমাদের প্রয়োজন নেই। তুমি তোমার পানি বুকে ধরে রাখ। আর যদি মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম মোতাবেক প্রবাহিত হও, তবে পানি ধরে রাখার কোন অধিকার তোমার নেই।”
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) এ চিঠি নীল নদের বুকে নিক্ষেপ করা মাত্রই নীল নদ জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেল। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত নীল নদের পানি প্রবাহিত অবস্থায় বিদ্যমান। সুবহানাল্লাহ
=================
জিকির আল্লাহর সর্বোত্তম ইবাদত !
জিকির হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তাআলার স্মরণে যে কাজই করা হয় তাই ইবাদত। সে হিসেবে জিকির আল্লাহ তাআলার ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য যত বিধান নাজিল করেছেন, তা বাস্তবায়নে গবেষণা করা, চিন্তা-ফিকির করাই হলো জিকির। আর জিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।
জিকিরের মাধ্যমেই মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করে থাকে। এ কারণেই মানুষ বিভিণ্ন সময় জিকিরের মজলিশের আয়োজন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিকিরকারীদের অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের কোনো দল যখন আল্লাহর জিকির করতে বসে; নিশ্চয় আল্লাহর ফেরেশতাগণ ওই জিকিরকারীদেরকে চারদিক থেকে পরিবেষ্টন করে থাকেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত দ্বারা তাদের (জিকিরকারীদের) ঢেকে ফেলেন এবং তাদের ওপর তখন শান্তি বর্ষিত হয়। এমনকি আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকটস্থ ফেরেশতাদের সম্মুখে তাদের (জিকিরকারীদের) স্মরণ করেন। (বুখারি ও মুসলিম)
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অসংখ্য জায়গায় জিকির করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খুব বেশি করে আল্লাহর স্মরণ (জিকির) করতে থাকো। আশা করা যায়, এ কাজেই তোমাদের কল্যাণ হবে। (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৫)
পরিশেষে…
শুধুমাত্র বা আল্লাহ-আল্লাহ, তাসবিহ-তাহলিল করার মধ্যেই জিকির সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রত্যেক কাজে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হলো সবচেয়ে বড় জিকির।
তা হতে পারে কুরআন তেলাওয়াত করা; কুরআন-হাদিস শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া; কুরআন-হাদিস নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা; ওয়াজ-নসিহত করা এবং তা শ্রবণ করার পাশাপাশি বাস্তবজীবনে আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে সর্বোত্তম জিকির করার তাওফিক দান করুন। জিকিরের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।