নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার খবর ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠার পরপরই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন এশা।
সম্প্রতি কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খবরের শিরোনামে আসেন ছাত্রলীগ নেত্রী এশা।
সোমবার রাতে আসলে কী ঘটেছিল? এই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসছে। আসলেই কী ইফফাত জাহান এশা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার! ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার পর দিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আখতার।
সেই শিক্ষকের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:
“সুফিয়া কামাল হলের যে মেয়েটির ছবি ভাইরাল হয়েছে, ওর রগ কাটে নি। ও সেই সময় অত্যাচারিত অন্য একটি মেয়ের চিৎকার শুনে প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেত্রীর রুমের গ্লাসে লাথি মেরেছিল। যে শিক্ষক তাকে পাশের হাসপাতালে নিয়েছেন, তাঁর কাছে ওই ছাত্রীই এটা বলেছে। সেই শিক্ষকের সাথে আমার কথা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও পাবেন এ তথ্য। তবে, তবে, ওখানে সাধারণ ছাত্রীরা বিরূপ পরিস্হিতিতে পড়েছিল। আক্রমণের স্বীকার হয়েছে। সাধারণ ছাত্রীরা ভীষণ ভয় পেয়েছে। জানলাম দোষী ছাত্রলীগ নেত্রী এষাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছেন উপাচার্য। আহত ছাত্রীকে হলের পাশের সরকারী কর্মচারী হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। পরে মগবাজারে তার লোকাল গার্ডিয়ানের বাসায় গেছে বলে জেনেছি। ছাত্রদের ন্যায্য দাবির সাথে আমরা আছি।হলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমি নিজেই খুব শংকিত।শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। সবারই সংযত হওয়া দরকার।”
গত মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রীর যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে- ওই ভিডিওটিতে স্পষ্ট শোনা গেছে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলছেন ‘আমি এ কি করলাম!’ তবে আহত ওই শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী এশার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হলে রাত ৮টার পর গেট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও ছাত্রীরা জোর করে হলের বাইরে আন্দোলনে যাচ্ছিলো। আমি হলে দায়িত্বরত শিক্ষকের ফোন পেয়ে তাদের যেতে বাধা দেই। তখন আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতৃত্বে তারা আমাকে ধাওয়া করে। এ ঘটনায় আমি আমার রুমে এসে দরজা আটকে দেই। তখন একটি মেয়ে আমার দরজার সামনে এসে চিৎকার করতে থাকে। চিৎকার শুনে মোরশেদা নামের ওই ছাত্রী আমার রুমের জানালায় লাথি মারতে থাকে। এসময় জানালার কাঁচ ভেঙে তার পা কেটে যায়।’
এদিকে ছাত্রলীগের একটি অংশ দাবি করছে, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেকোনও ঘটনা না জেনেই জামায়াত-শিবিরের গুজবে কান দিয়ে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে বহিষ্কার করে দিলো। যদি এশা বেয়াদব বা সাংগঠনিক কোনও শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে তাহলে তাকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শোকজ করা যেত। তদন্ত করা যেত। এসবের কিছুই করা হয়নি। এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারেরও দাবি তুলেছেন অনেকেই।
সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগে এমনভাবে একজন হল শাখার সভাপতিকে বহিষ্কারের পেছনে হলের আরও ছাত্রলীগ নেত্রীর হস্তক্ষেপ রয়েছে।
এশার সহপাঠীরা বলেন, এশার ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ছাত্রলীগ নেত্রী হয়ে কিছুটা বিরূপ মনোভাব দেখাতেন এশা। এশার প্রতিপক্ষরা জুতার মালা পরানোর সময় রুমের বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী এশার বাবা ইসমাইল হোসেন ঝিনাইদহ জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। মেয়ের বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই ক্লাসের প্রথম হয়ে আসছে। অনার্সে ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিল। আমি যতদূর জানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার।’
এশার বাবা আরও বলেন, ‘সামনেই ছাত্রলীগের সম্মেলন। আর এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমার মেয়েকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রে ঝিনাইদহের কয়েকজন ছাত্রীও জড়িত রয়েছে। যাতে এশা আগামীতে কোনও পদে না থাকতে পারে।’
তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমি একজন বাবা হিসেবে নয় একজন আইনের লোক হিসেবে চাই- এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
ছাত্রলীগ নেত্রী এশার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের দেবতলা গ্রামে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান তপন। এশা ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি ও ২০১২ সালে ঝিনাইদহ সরকারি নুরুন্নাহার মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া ছিল- কোনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী যেন আন্দোলনকারীদের সাথে কোনও প্রকারের ঝামেলায় না জড়ায়। আমি মনে করি এশা ষড়যন্ত্রের শিকার। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যেটা সত্য সেটাই সবার সামনে উন্মোচন করা হবে এবং যে বা যারা দোষী তাদের ক্ষেত্রে সংগঠনের নিয়ম বা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’