নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,১৩ এপ্রিল ২০১৮: নরসিংদীর পলাশে উত্তরাধিকার সনদ জালিয়াতি করে নিজেদের লোককে গ্রহিতা সাজিয়ে ৪টি দলিল সৃজন করে প্রায় ৪ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউপি সদস্য (৪ নং ওয়ার্ড) ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পলাশ থানায় একটি প্রতারনা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় অভিযুক্ত আসামীরা হলেন- সান্তানপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম চৌধুরীর ছেলে, ব্যবসায়ী (ইজি ফ্যাশন ব্র্যান্ড এর চেয়ারম্যান) আসাদ চৌধুরী ও তার ভাই ইসহাক চৌধুরী এবং তৌহিদ চৌধুরী। পলাশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: গোলাম মস্তোফা মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণ ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখিয়ে তার সই নকল করে জমির প্রকৃত মালিকদের উত্তরাধিকার সনদ তৈরি করে জমি কেনাবেচার নথিপত্র তৈরি করা হয়। এক পক্ষকে বিক্রেতা দেখিয়ে ৪টি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার পর তিন ভাই আসাদ চৌধুরী, ইসহাক চৌধুরী ও তৌহিদ চৌধুরী ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক বলে দাবী করছেন।
ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য জালাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে জানান, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই এর অনুপস্থিতিতে গত ১৪ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুযোগে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখিয়ে তার সই জাল করে উত্তরাধিকার সনদ তৈরি করে দলিলের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করা হয়। এরপর ঢাকায় গিয়ে কমিশনের মাধ্যমে চারটি জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে মোট চার বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। জমির মূল মালিক এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তিনি আরও জানান, ‘গত ৯ এপ্রিল একটি সূত্র থেকে এই চার দলিলে জমি হাতিয়ে নেওয়ার খবর পাই। এরপর আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারি ওই চক্রটি এর আগে এভাবে বহু মানুষের জমি হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকার অনেক হিন্দু মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়লেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার শাহাদাত হোসেন এবং ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মানিক মিয়ার সহযোগিতায় তিন ভাই এলাকার একের পর এক জমি হাতিয়ে নিচ্ছেন। এরপর আমি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি।
কাজৈর গ্রামে সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, রাতারাতি ভিটেবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছি, বুঝতেই পারিনি। একের পর এক বাড়ির জমি ওদের হাতে চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শংকিত।
এলাকাবাসী জানান, আসাদ চৌধুরী, ইসহাক চৌধুরী এবং তৌহিদ চৌধুরী তিন ভাই মিলে এলাকায় কারসাজি করে গ্রামের নিরীহ অসহায় মানুষের জমিজমা নিজেদের কব্জায় নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।
সর্বশেষ একটি জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা যায়, সুরেন্দ্র চন্দ্র মিশ্রের সন্তান ললনা মিশ্রকে দাতা দেখিয়ে ভিরিন্দা মৌজার সাড়ে ১৬ শতক জমি হাতিয়ে নিয়েছেন আসাদ চৌধুরী। একই মৌজার ১৮ শতক রেজিস্ট্রি করেছেন; যেখানে বিক্রেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে চিত্ত রঞ্জন দাসের ছেলে নয়ন কুমার দাসকে। এই দলিলে ক্রেতা হিসেবে আসাদ চৌধুরীর পাশাপাশি তার অন্য দুই ভাইকেও দেখানো হয়। একই মৌজার স্বর্দীপ চন্দ্র মিত্র থেকে ২২ শতক এবং মৃণাল কান্তি মিশ্র, গৌতম চন্দ্র মিত্র, নব কৃষ্ণ মিত্র, সুমন মিত্র, সৌরভ চন্দ্র মিত্র, কমল চন্দ্র মিত্র ও অমল চন্দ্র মিত্রকে বিক্রেতা দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় ৫৬ শতক জমি। এই চারটি দলিলে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখিয়ে তার সই জাল করা হয়েছে।
ভিরিন্দা গ্রামে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষের জমি এই তিন ভাইয়ের কব্জায় চলে গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বসতভিটা। রয়েছে অনেক ফসলি জমিও। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ বিঘার মতো জমি তারা হাতিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ চার দলিলেই দখলে নেয়া হয়েছে চার বিঘা জমি; যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত আসাদ চৌধুরী বলেন, আমি সব কাগজপত্র ঠিকভাবে করেই জমি কিনেছি। আমার বিরুদ্ধে একটি প্রভাবশালী মহল ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ওই মহলটিই বরং হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করতেছে, তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। যাদের নিকট থেকে জমি কিনেছি তাদেরতো কোন অভিযোগ নাই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পলাশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: গোলাম মস্তোফা বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি প্রতারনা মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।