খন্দকার শাহিন,নরসিংদী প্রতিদিন, শনিবার ১৪ এপ্রিল ২০১৮: সৌদি আরবের রিয়াদে ইলেকট্রনিক্স শক
সার্কিটের অগ্নিকান্ড থেকে কক্ষে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লেগে বিস্ফোরণে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ৬ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো ২ জন মারা যান। গুরুতর আহতরা সিমুছী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান বাংলাদেশ দূতাবাস। নিহতদের মরদেহ একই হাসপাতালের হিমাগারে রাখা আছে।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০ টা এবং সৌদি আরব সময় সকাল ৭.৩০ টায় রিয়াদের দাখেল মদুদ এলাকায় এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। তারা সকলে আল-মাজিন ও আল-এনজাজ কোম্পানির কর্মী। তারা রিয়াদ বিমান বন্দর সংলগ্ন নূরা ইউসিভার্সিটিতে কর্মরত ছিলেন। তারা শুক্রবার ভোর ৩ টায় কর্মস্থল থেকে বাসস্থানে ফিরেন।
সৌদিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলার সারোয়ার আলমকে নির্দেশনা দেন ।
রিয়াদ সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মেজর মোহাম্মদ আল-হামাদির এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, শ্রমিকদের থাকার ওই ভবনের প্রবেশদ্বারে যখন আগুন লাগে তখন সেখানে ৪৫ জন ছিলেন। ওখানে মোট ৫৪ জন থাকতেন, যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি।
ভেতরের দিকের কক্ষগুলো থেকে শ্রমিকদের বেরোনোর অন্য কোনো পথ ছিল না। নিহত সাতজনের অধিকাংশই ওই সব কক্ষের বাসিন্দা বলে সিভিল ডিফেন্সের এক ট্যুইটে বলা হয়।
নিহত ৮ জনের নাম জানা গেছে।তারা হলেন, ১. সোলেমান- যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। ২. সেলিম, বি-বাড়িয়া। ৩. জুবায়ের, সিলেট। ৪. মজিদ, রূপগঞ্জ, নারায়নগন্জ। ৫. হিমেল, কালিগন্জ, গাজীপুর। ৬. রবিন, মাদবদী, নরসিংদী। ৭. ইকবাল, কিশোরগঞ্জ। ৮. রাকিব, মানিকগঞ্জ।
আহতদের মধ্যে ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে।
তারা হলেন, ১. নাজমুল, মানিকগঞ্জ। ২. খোরশেদ শেখ, ঝিনাইদহ। ৩. পাবেল, পলাশ, নরসিংদী। ৪. নাজমুল, বগুড়া। ৫. সাইম, মানিকগঞ্জ। বাকিদের নাম পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
নরসিংদী প্রতিদিন এ খবর প্রকাশের পর হতাহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতার জন্য রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং এর সচিব সফিকুল ইসলাম সিমুছি হাসপাতালে যান। তিনি জানান, ৮ জন নিহত এবং ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে, রিয়াদের ওই হাসপাতালের হিমাগারে ৬ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকি হতাহতের খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করছেন তিনি। ধারনা করা হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পার। ধারনা করা হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পার।
এদিকে মাধবদীতে নিহত প্রবাসী রবিনের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ধার দেনা করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। তার বাবা আবুল হোসেন নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, তিন মাস আগে পলাশের এক দালালের সহযোগিতায় প্রায় ছয় লাখ টাকা মত খরচ করে সৌদিতে পাঠিয়েছেন। ছেলের টাকা উপার্জন করার আগেই ছেলেটা আগুনে পুড়ে মারা গেল। এখন আমার সংসারে কি অবস্থা হবে। আমি কি করবো কিছুর বুঝতে পারছি না, মানুষের পাওনা পরিশোধ করবো কিভাবে, আমার মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নাই।
রবিনের স্বজন জাহাঙ্গীর নরসিংদী প্রতিদিনকে জানান, হতদরিদ্র পরিবারের কাছে সরকার যেন মৃতদেহটি অতিদ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে ক্ষতি পূরণ দেয়ায় জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।