নিজস্ব প্রতিবেদক*
নরসিংদী প্রতিদিন,মঙ্গলবার,১ মে ২০১৮: নরসিংদীর মনোহরদীতে দুই দফা শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ জমির পানের বরজ। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ঋণ পরিশোধ ও পান চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় দুই হাজার পানচাষী। সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষীরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ৩ শত ২০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৩ শত ১০ হেক্টর-ই মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর, লেবুতলা, চর মান্দালিয়া, কৃষ্ণপুর, বড়চাপা ও চালাকচর ইউনিয়নে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায়। সু-স্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
পানচাষীরা জানান, চলতি মাসে (এপ্রিল) দুই দফা শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমির পানের বরজ। মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে ১ শত ৬০ হেক্টর জমির পানের বরজ সম্পূর্ণ ও ১ শত হেক্টর জমির পানের বরজ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঋণের টাকায় চাষ করা পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন প্রায় দুই হাজার পানচাষী। দেখা দিয়েছে সংসারের ব্যয় নির্বাহের অনিশ্চয়তা।
খিদিরপুরের পানচাষী দুধু মিয়া বলেন, ‘বাঁশের শলা, খৈল, সার, কীটনাশক, মজুরিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ মিলিয়ে পান চাষে বড় অংকের পূঁজির প্রয়োজন হয়। ঋণের টাকায় আমরা পান চাষ করে সবসময় লাভের মুখ দেখতে পাই না। এ বছর শিলাবৃষ্টি পড়ে পুরো বরজই নষ্ট হয়ে গেছে।’
অপর চাষী মেঘন দাস বলেন,‘বেশিরভাগ পানের জমি নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব বরজে পানের কিছু লতা অবশিষ্ট আছে টানা বৃষ্টির কারণে সেগুলোও মরে গেছে। নতুন করে পান চাষ করতে হলে পূঁজি পাব কোথায়, ঋণের টাকা শোধ করবো কিভাবে ভেবে পাচ্ছি না।
একই এলাকার পান চাষী তারা মিয়া বলেন, ‘পান চাষের পদ্ধতি অন্যান্য ফসল চাষের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন ও কষ্টসাধ্য। যার ফলে যে কেউ ইচ্ছে করলেই পান চাষ করতে পারেন না। সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষীদের সহায়তা না করে তাহলে ভবিষ্যতে তারা পান চাষের আগ্রহ হারাবে।
মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রশিদ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পান চাষে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ছোট-বড় দুই হাজার পানের বরজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত তালিকা প্রণয়ণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষীদের ক্ষতিপূরণ ও পুণর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন/আসাদুজ্জামান রিপন/নরসিংদী।