নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিদন,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৮: রাজধানীর মিরপুরে দারুস সালাম থানা এলাকার বাংলা কলেজের পাশে সরকারি কোয়ার্টারের চতুর্থ তলা থেকে ২ মেয়েসহ মায়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (৩০ এপ্রিল) রাত পৌনে ৮টার দিকে পাশের প্ল্যাটের লোকজন রুমের ভেতরে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। রাত ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন- জেসমিন আক্তার (৩৫), তার দুই মেয়ে হাসিবা তাহসীন হিমি (০৯) ও আদিবা তাহসীন হানি (০৫)।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, তিনজনেরই গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জেসমিনের পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ওই পরিবারের প্রধান হাসিবুল ইসলাম হাসান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোষাধ্যক্ষ। তিনি স্ত্রী এবং দুই মেয়েসহ সিটাইপ সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন।
দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ওই বাসায় ঢুকে দেখি দুই মেয়ের লাশ খাটের উপর এবং মায়ের লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে।’
এ মুহূর্তে পুলিশ ওই বাসার ভেতরে অবস্থান করছে। তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কারণ কিংবা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি ডিসি মাসুদ আহমেদ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
দারুস সালাম থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) সেলিমুজ্জামানের ধারণা, দুই মেয়েকে হত্যা করে জেসমিন আত্মঘাতী হয়েছেন।
ভাই শাহিনুর ইসলাম জেসমিনের সঙ্গে থাকেন। তিনি চাকরি খুঁজছেন। তিনি জানান, ‘আমার বোনের মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসেও ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল আত্নহত্যা করার জন্য। সবসময় দুশ্চিন্তা করতো। মানসিক চাপে থাকতো।’
‘৩টার দিকে বাসায় ঢুকে দেখি রুম আটকানো। টিভির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।’ এরপর আর ডাকাডাকি করেননি। পরে বাইরে চলে যাই । সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে তখন দেখতে পান দুলাভাই আছেন। রুমের দরজা তখনও বন্ধ। তার দুলাভাই ৫টার দিকে বাসায় ফেরেন। তখন তাদের সন্দেহ হয়। আবার কি আগের মতো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন? ডাকাডাকি করেন। দুলাভাই দরজার ফাঁক দিয়ে রক্ত দেখতে পান। এরপর তারা দরজা ভাঙেন।’
ওই রুম থেকে মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমটির জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের জানান, তারা ধারণা করছেন, দুই সন্তানকে হত্যা করে জেসমিন নিজে আত্মহত্যা করেছেন। রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
জেসমিনের ভাই শাহিনুর ইসলাম ধারণা করেন, আনুমানিক বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে।
জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, তার আপা ভারতসহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করতো। মানসিক রোগী ছিল না। তবে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল। সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তা করতো।
হাসিবুল হাসানের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামে। জেসমিনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।
এস আই রুহুল আমিন জানায়, জেসমিনের গলা ও দুই হাতের কব্জি কাটা। পেটে ৮-১০টি আঘাত আছে। বড় মেয়ে মিহির বুকে তিনটি ছুরির আঘাত, হাতের কব্জি কাটা ও গলা জবাই করা। আর ছোট মেয়ে হানির পেটে একটাই ছুড়ির আঘাত। তার নাড়িভুড়ি বের হওয়া।
ঘটনাস্থলে রাত সাড়ে ১০টার পর সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি টিম এসে তদন্ত শুরু করেন ।