নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,বুধবার, ০১ মে ২০১৮:
‘এই ঝিগাতলা… ঝিগতলা উঠেন ভাই উঠেন’ এভাবেই চিৎকার করে যাত্রীদের ডাকতে ব্যস্ত সাত বছরের রবিন। যে বয়সে রবিনের মায়ের আচলের তলে থাকার কথা সেই বয়সে চলন্ত গাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে। মে দিবস কী জানা নেই তার। রবিনের চিন্তা একটাই ঠিকমতো ভাড়া তুলে ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোনমতে একটি লোহার পাতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে ভাড়া তুলতে রবিন।
ভাড়া তুলার একফাঁকে রবিনকে জিজ্ঞেস করা হলে এভাবে দাড়িয়ে ভাড়া তুললে কষ্ট হয়না? রবিন বলে, ‘আমাগো ডিউটি এই রকমই। দাঁড়ায় দাঁড়ায় করতে হয়। ভয় তো একটু লাগেই। তারপরেও আমাদের সংসার তো চালাতে হইবো। ঝুইলা ঝুইলা অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর ঝুলাতে কিছু মনে হয় না।’
শুধু রবিন নয়, তার মতো হাজারো শিশু শ্রমিক জীবনের ঝুঁকিতে কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ ভাগ লেগুনাতেই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে সাত থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরা। যারা পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ৩/৪শ টাকার বিনিময়ে দৈনিক শ্রম দিচ্ছে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত।
লেদমেশিনের কারখানা ও গাড়ির ওয়ার্কশপগুলোতে অবস্থা আরো ভয়াবহ। এসব জায়গায় রাত দিন নিজের চেয়েও ভারি যন্ত্রপাতি আর ইলেকট্রিক বিভিন্ন মেশিন দিয়ে কাজ করছে শিশুরা। কাজ করতে গিয়ে ভারি যন্ত্রপাতির দ্বারা প্রায়ই অনেক শিশু শ্রমিক আহতও হচ্ছে।
লেদমেশিনের কারখানায় কাজ করা এক শিশু শ্রমিকের বলে, আমরা গরীব। কি আর করবো। আমার টাকা দিয়ে বাপ-মায় কিস্তি চালায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এমুহূর্তে দেশে প্রায় ১৫ লাখ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। যারা মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা সংবিধানের ধারার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সংবিধান মতে, ১৮ বছরের কম বয়সী সবাই শিশু, যাদের কোন শ্রমের সঙ্গে জড়িত হবার কথা নয়। কিন্তু শুধু শ্রমই নয় জীবিকার তাগিদে শিশুরা দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ পেশার সঙ্গে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশু শ্রম নিরসনে সরকারের নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে আলাদা অধিদপ্তর খোলার পাশাপাশি শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলা জরুরি বলে মনে করেন তারা।