মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু*
নরসিংদী প্রতিদিন,রবিবার,২০ মে ২০১৮: নরসিংদীতে টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত। ফলে পাকা ধান মাঠে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। ধান কাটার শ্রমিকও পাচ্ছেন না তারা। আবার অনেকে ধান কোনোমতে কাটলেও অতিবৃষ্টি ও পর্যাপ্ত রোদের অভাবে শুকাতে পারছেন না।এমনকি মাড়াই করা ও খড় শুকাতে পারছেন না। তাই কৃষকের স্বপ্নের ধান এখন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। কেউ কেউ রঙ ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে ধান কাটছেনই না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই বছর জেলার ছোট-বড় ও মাঝারি শ্রেণির দেড় লাখ কৃষক ৫৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটতে পেরেছেন তারা।
কৃষকেরা জানিয়েছেন গত ২০/২৫ দিন ধরে নরসিংদীসহ আশেপাশের অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার নি¤œ অঞ্চলের ধান ক্ষেতগুলো তলিয়ে যায়। কেউ কেউ তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান কেটে আনলেও তা মাড়াই কিংবা রোদের অভাবে শুকাতে পারছেন না। ফলে তাদেও স্বপ্নের সোনালী ফসল মাঠে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ধান গোলাজাতকরণও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া সড়কগুলোও কাদাজলে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
রায়পুরা উপজেলার নলবাটা এলাকার ধানচাষী আল আমিন মিয়া বলেন, ‘এবছর ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করি। ধানের ফলনও ভাল হয়। ধান কাটার মৌসুম এলেই আমদের এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখে দেয়। গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিক নিয়ে পেকে যাওয়া ধান কেটে আনলেও অতিবৃষ্টি এবং পর্যাপ্ত রোদের অভাবে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ ব্যহত হয়। ফলে মাঠে কেটে রাখা ধান ঘরে তুলে আনতে পারিনি তা ওখানে পড়েই নষ্ট হচ্ছে।’
মনোহরদী উপজেলার কাচিকাটা এলাকার কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, ‘এ বছর ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। গত সপ্তাহে ঝড়ো হাওয়ায় তার জমির ধান গাছ নুয়ে পড়ে সেই সাথে টানা বৃষ্টিতে পুরো জমি তলিয়ে যায়। এতে ধান গাছের গোড়া পচন ধরে তা নষ্ট হয়ে যায়।
জলাবদ্ব জমিতে ধান কাটছিলেন বেলাব উপজেলার চর উজিলাব গ্রামের ছমির আলী। তিনি বলেন, ‘কতো দিন আগেও জমিতে পানি আছিল না, অখন হাঁটু পানি; এরলাইগ্যা কেউ ক্ষেত কাটতে আইয়ে না। নিজের ক্ষেতের ধান নিজেই কাটি।’
শিবপুর উপজেলার হরিহরদী গ্রামের ইকবাল মিয়া বলেন, ‘ধানের বাম্পার ফলন অইছে, কিন্তু ধানের রং না থাকলে ভালা দামে বিক্রি করন যাইতো না। ৭ দিন ধইরা বাড়ি আর ক্ষেতে দৌড়াদৌড়ি কইরা ধান ধান কাইট্যা ও মাড়াই কইরা বাড়ী আনলেও এখনও হুকাইতে পাররাম না। রইদ ওঠলে ধান লাইড়া দেই আবার মেঘ আইলে বস্তাত ভইরা আউযাই রাখি।’
রায়পুরা উপজেলার হরিপুর গ্রামের গ্রামের গৃহবধূ নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ধান লইয়া রাস্তা আর বাড়িতে দৌড়াদৌড়ি করন লাগে। হারা দিনে তিন ঘণ্টায় রইদ ওঠে না।’
দেশের এ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে জেলার প্রায় অধিকাংশ কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষয় ক্ষতি সহজে পোষানো সম্ভব হবে না বলে ধারণা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লতাফত হোসেন বোরো মৌসুমের ফসল ঘরে তোলার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা প্রাকৃতিক দুর্যোগ উল্লেখ করে, এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য কৃষকের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান বাজারে কৃষি শ্রমিক সঙ্কট অন্যতম একটি সমস্যা। এ সঙ্কট মোকাবেলায় কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানী সহজ কিস্তিতে এ সকল কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে।’
তবে মাড়াইকৃত সব ধান এক জায়গায় স্তুপীকৃত করে না রেখে, খোলামেলা পরিবশে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
খবর: আলোকিত খবর ডটকম