নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী প্রতিদিন, ২১ মে, সোমবার ২০১৮: নরসিংদীর মনোহরদীতে চাঁদাবাজি ও জমি সংক্রান্ত জের ধরে এক প্রবাসীর বাড়িতে লুটপাট ও পরিবাবের উপড় হামলা চালিয়েছে। ওই সময় হামলাকারীরা ১ ভরি স্বর্নালঙ্কার সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। এসময় চাঁন মিয়া তার ২ ভাই ও পরিবারকে নিয়ে প্রবাসীর পরিবারের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে বেদম মারধোর করে। শুধু তাই নয় প্রানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদানও করে। পরে স্থানীয়রা রক্তাত অবস্থায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। এই ঘটনায় প্রবাসী স্ত্রী নাজমা বেগম ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মনোহরদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ এসে চাঁন মিয়াকে প্রেপ্তার করে পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে প্রবাসীর বাড়িতে ভাংচুর ও ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। এবং উল্টো মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিয়ে আসছে। ঘটনার পর থেকেই হামলাকারীদের ভয়ে প্রায় তিন মাস ধরে নিজ বাড়িতে যেতে পারছেননা ভূক্তভোগী পরিবার। তাই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে গ্রাম জুড়ে।
ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, প্রায় ১০ বছর যাবত সৌদিতে বসবাস করেছেন মনোহরদীর উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের চর বগাদি গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া। বিদেশে অর্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি নির্মান করেন প্রবাসী এই পরিবার। বাড়ী নির্মানের পর চাঁন মিয়া থেকে সাড়ে তিন শতাংশ রাস্তার জন্য জমি কিনেন প্রবাসী মানিক মিয়া। চাঁন মিয়া মানিক মিয়ার সর্ম্পক মামা-ভাগ্নিনা। মানিক মিয়া সৌদি চলে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় প্রবাসীর পরিবার থেকে টাকা দাবী করে আসছিল। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ৪০/৫০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া হয় তাকে। এরমধ্যে নাজমা চাঁদার টাকা না দিলেই ভয়ভিতি সহ নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিল। প্রতিবাদ করলেই চালাতো নানা নির্যাতন । সর্বশেষ টাকা দিতে অস্বীকৃতি করায় চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে ১০/১৫ জন লোক দা, লাঠিসোটা, লোহার রড, শাবল, দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় হামলাকারীরা বাড়ির আসবাপত্র সহ ভেতরে থাকা নগদটাকা ও স্বর্নালঙ্কার সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। প্রবাসীর ছেলে ও মেয়েকে মারধোর করে এবং স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি রড দিয়ে পিটায়ে রক্তার করে। শুধু তাই নয় প্রানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদানও করে। পরে স্থানীয়রা রক্তাত অবস্থায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে।
প্রবাসী স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, বাড়ী থেকে রাস্তায় বের হবার কোন রাস্তা না থাকায় চাঁন মিয়া থেকে সাড়ে তিন শতাংশ জমি কিনি। সেখানে মাটি ফেলে নতুন করেগাছ লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে একটি ছোট দোকান ঘরও করে দোকান চালায়। বিগত কয়েক মাস ধরে চাঁন মিয়া আমার নিকট টাকা দাবী করে আসছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাদের বাড়ী থেকে বের হবার রাস্তাটি বেড়া দিয়ে আটকে রাখে। আমার মেয়ে স্কুলে যাবার সময় বেড়া একটু সড়ে নেবার জন্য ফাঁকা করায় আমার মেয়ে, ছেলেও আমাকে বেধম মারধোর করে। । এসময় তারা আমার ঘরে লুটপাট চালায় এবং বাড়ির আসবাপত্র সহ ভেতরে থাকা নগদটাকা ও স্বর্নালঙ্কার সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
প্রবাসী স্ত্রী’র ছোট ভাই সিরাজ উদ্দিন বলেন, এত বড় ঘটনা ঘটলেও চেয়ারম্যান ও মেম্বার তাকে কিছুই করতে পারেনা। উল্টো চাঁন মিয়ার অব্যাহত হুমকির মুখে আমার বড় বোন বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ীতে আসলেই বোনকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মিথ্যে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়। আমি সরকারের কাছে সঠিক বিচার চাই।
এলাকাবাসী মোস্তফা মিয়া বলেন, চাঁন মিয়া এর আগে নাজমাকে ১০ থেকে ১২ বার মারধোর করে থাকেন। এলাকাবাসি তার দা, লাঠিসোটা, লোহার রড, শাবল, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রকে ভয় পেয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না। এই নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও পুলিশ কয়েকবার এই বিষয় নিয়ে ফয়সালা করে। কিন্তু সে তাদের সবাইকে বৃর্দ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে প্রবাসীর জমি দখলের পায়তারা করছে।
অভিযুক্ত চাঁন মিয়াকে মোবাইলে ফোন করলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ( ০১৭৮০০০৯৫০৪)
মনোরহদীর থানার উপ-পরির্দশক মো: মেঝবাহ উদ্দিন বলেন, প্রবাসীর ঘরে তালা মেরেছে এই বিষয়ে আমি জানিনা। এই তাদের পারিবারিক বিষয় তারাই ভাল বলতে পারবে। আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে তাদের সাথে একটি মারামারির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেইটি তদন্ত করে চার্জসিট দেওয়া হয়েছে।
#