নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,মঙ্গলবার,১২ জুন ২০১৮: স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের মদদদাতারা ক্ষমতায় ফিরলে বাংলাদেশ রসাতলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় কানাডার টরন্টোতে তাঁকে প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি পলাতক নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনতে তাঁর সরকার কানাডার আদালতে লড়বে।
এর আগে একই দিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কুইবেকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডা সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন।
কানাডার কুইবেকে জি-৭ আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর রবিবার টরন্টোয় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ওই দিন সন্ধ্যায় মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে কানাডা আওয়ামী লীগের আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়।
ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন হয় না। ওই স্বাধীনতাবিরোধী, ওই খুনিদের মদদদানকারী ক্ষমতায় এলে আবার দেশ রসাতলে যাবে।
আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলেই জি-৭ আউটরিচ সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত করেছে। ’
এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের আবারও ক্ষমতায় থাকার গুরুত্ব প্রবাসীদের বোঝান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা আজকে শুরু হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হচ্ছে, গ্রাম পর্যন্ত যে উন্নয়ন হচ্ছে, এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথাও প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছি। আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছি। ’
এই বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, সবাইকে সে বিষয়টা দেখতে হবে। ’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া যে সরকারের নয়, আদালতের বিষয়, তা প্রবাসীদের বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের এক দিন না এক দিন সাজা পেতে হয়। আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়া আল্লাহও পছন্দ করেন না। আমি তো গ্রেপ্তার করিনি। আদালত সাজা দিয়েছে। বিএনপির এত বড় বড় আইনজীবী, তাঁরা তো প্রমাণ করতে পারেননি যে খালেদা জিয়া নির্দোষ। ’
২০১৫ সালের প্রথম দিকে বিএনপির লাগাতার কর্মসূচিতে নাশকতায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করতাম, তবে যখন সন্ত্রাস করেছে, মানুষ খুন করেছে, তখনই গ্রেপ্তার করতে পারতাম। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী নূর চৌধুরী বর্তমানে গোপনে কানাডায় বাস করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের শাস্তি কার্যকর করতে চাই। কেননা তারা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ। ’ তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর পলাতক অন্য খুনিদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। যাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং রশিদ ও ডালিম পাকিস্তানে বসবাস করছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তাঁর বাসভবন লা পেতিত ফ্রন্টেন্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। পরে বৈঠক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রেসসচিব জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়ে ট্রুডোকে বলেন, ‘কানাডায় বসবাসকারী নূর চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী দুজনের মধ্যে অন্যতম। সে একজন আত্মস্বীকৃত খুনি এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত। ’
জবাবে জাস্টিন ট্রুডো সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বিষয়টা বুঝতে পারি যে এটা আপনার জন্য কতটা বেদনার। ’ সংশ্লিষ্ট কানাডীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে একান্তে কাজ করছেন উল্লেখ করে ট্রুডো বলেন, নূর চৌধুরী কানাডার নাগরিকত্বের মর্যাদা পেতে পারে না এবং সে কানাডার নাগরিকও নয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে তাঁর দেশের প্রচলিত আইনগত বিষয় ব্যাখ্যা করেন।
মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত বব রে’কে আশ্বস্ত করে বলেছেন, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে কর্মরত বিদেশি ত্রাণকর্মীদের ভিসা সমস্যা সমাধান করা হবে। বব রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে দেখা করতে এলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি দেখাশোনা করছে। শেখ হাসিনা বলেন, ত্রাণকর্মীর বেশে বহু বিদেশি নাগরিকের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে সরকার শঙ্কিত, যা নারী ও শিশু পাচার, যৌন অপব্যবহার, সন্ত্রাস এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
বব রে বলেন, পরিদর্শনকালে তিনি সহিংসতার কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বলেন, ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্র : বাসস।