নিউজ ডেস্ক,নরসিংদী প্রতিদিন,শনিবার,২৩ জুন ২০১৮: দেশের আট জেলায় গতকাল দিবাগত গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ছয়-সাত ঘণ্টার মধ্যে ৩৫ জনের প্রাণহানীর খবর পাওয়া গেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অর্ধ শতাধিক মানুষ।
হতাহতদের মধ্যে অনেকেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে কর্মস্থলে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। দূরপাল্লার বাস বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এই সময়ে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৩৩ জন।
শনিবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে উপজেলার ঢাকা-রংপুর সড়কের মহেশপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।
এ ঘটনায় হতাহতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে আহতরা জানিয়েছেন, বাস যাত্রীদের অধিকাংশই নীলফামারী, কুষ্টিয়া ও ঠাকুরগাঁও জেলার যাত্রী ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই পুরুষ, একজন নারী। আহতদের মধ্যে নারী-পুরুষ ছাড়া শিশুরাও রয়েছে।
ওসি মাহমুদুল হাসান সকালে জানান, আলম পরিবহনের বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথে ভোরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসটি কেন নিয়ন্ত্রণ হারালো, তা এখনি বলা যাচ্ছে না।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহত অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে জানান পলাশবাড়ী থানার ওসি।
রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাগলাপীরে বিআরটিসির দোতলা বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার পাগলাপীরের সলেয়া শাহ বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল বাকি শনিবার সকালে জানান, দোতলা বাসটি যাত্রী নিয়ে দিনাজপুর থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পাগলাপীরের সলেয়া শাহ এলাকায় বাসটির চাকা পাংচার হয়ে যায়।
তখন যাত্রীদের অনেকে গরমের কারণে বাস থেকে নেমে রাস্তার উওর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রাক বাসটিকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় বসা ছয় বাসযাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হতাহতরা সবাই দিনাজপুরের।
ওসি আরো জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন নিশাত ও সাজ্জাদ।
সিরাজগঞ্জ
ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে অন্তত ২ ব্যক্তি নিহতের খবর পাওয়া গেছে।সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর কাদের জিলানী জানান, শনিবার ভোরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ভুঁইয়াগাতি এলাকায় ঢাকা থেকে বগুড়াগামী আর কে পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাসের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক শফিকুল ইসলাম এবং হেলপার রফিকুল ইসলাম নিহত হয়। আহত হয় বাসের অন্তত ১৫ যাত্রী। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নিহতদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার শ্যামনাই গ্রামে।
সাভার
সাভারের ঢাকা-আরিচা সড়কের আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২০ জন। শনিবার সকাল ৭ টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, দ্রুতি পরিবহনের বাসটি রংপুর থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় ইউটার্ন নেওয়ার সময় বাসটিকে ট্রাকটি পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে ২৩ জনকে উদ্ধার করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এসআই।
নাটোর
নাটোর সদর উপজেলায় ইজিবাইক ও ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ৩ জন। শনিবার সকাল ৭টার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সুলতা রানী দেবনাথ ও কানাই লাল দেবনাথ। তাদের বাড়ি নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামে।
নাটোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মহিউদ্দিন আহমদ এবং নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল জানান, ইজিবাইকটি স্টেশন এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে মিশন হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। শহরের আলাইপুরে বালুবাহী একটি ট্রাক পেছন থেকে ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ২ যাত্রী নিহত হন।
আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন নিহত সুলতা দেবনাথের স্বামী মঙ্গল দেবনাথ, তাদের কন্যা আঁখি দেবনাথ এবং ইজিবাইকচালক আবুল কালাম।
পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করেছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে বলে জানায় পুলিশ।
পাবনা
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও তাঁর সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০ বাসযাত্রী। শনিবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলার বগুড়া-নগরবাড়ী সড়কের ভুইয়াগাতী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামনাই গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ট্রাকচালক শরিফ ফকির (৩৫) এবং একই গ্রামের ধুকু মিয়ার ছেলে চালকের সহকারী রফিকুল ইসলাম (৩০)।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর কাদির জিলানী জানান, আর কে পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি বগুড়া থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। ভুইয়াগাঁতী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া বাজারে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক ধানকল মালিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে।
নিহত ধানকল মালিক ওবায়দুর রহমান (৪৫) আলোকদিয়া চকপাড়ার মরহুম ইরফান আলীর ছেলে। আহত দুই মোটরসাইকেল আরোহী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মহসিন (৩৫) ও একই উপজেলার ছুটিপুর গ্রামের হাফিজুল বিশ্বাসের ছেলে মাসুদ রানা (৩৬)। তাঁরা খালাতো ভাই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ধানকল মালিক ওবায়দুর চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়ক ধরে হেঁটে আলোকদিয়া বিশ্বাস তেল পাম্পের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরগামী একটি মোটরসাইকেল ওবায়দুরকে খুব জোরে ধাক্কা দেয়। এতে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে গিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে যায়, বাম পা ভেঙে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাকির হোসেন বলেন, আহতদের অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ দুর্ঘটনার বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই অরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের ঘোনাপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মচারী ইমরান হোসেন (৩৮), মাঠ কর্মকর্তা পুলক ব্যাপারী (৩৪)।
মারাত্মক আহত রিক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক রুবেল ফকির (৩৫) সহ ১০ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের সবার বাড়ি পিরোজপুরে।
রিক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি শেষে তিনজন পিরোজপুর থেকে কর্মস্থল গোপালগঞ্জ আসছিলেন।
সদর থানার এসআই শওকত হোসেন জানান, বাসটি বাগেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ আসছিল। পথে মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান।
পরে ওই বাসটি বেপরোয়া গতিতে ওই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভ্যান ও একটি লোকাল বাসকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সেটি সড়কের আইল্যান্ডে উঠে যায়। এতে বাস ও ভ্যানের ১০ যাত্রী আহত হন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা এসে সড়ক থেকে বাস দুটি অপসারণ করেন।